মার্চ ২৮, ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম
ব্যাংক কোম্পানীতে একই পরিবার থেকে ৩ জনের বেশী পরিচালক হতে পারবে না। মঙ্গলবার এমন সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর আরও এক দফা সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা।
২০১৭ সালে মন্ত্রীসভার নেয়া বিশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই পরিবার থেকে ৪ জন পরিচালক হওয়ার সুযোগ দিয়ে আইনটি সংশোধন করা হয়। ২০২৩ সালে এসে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হলো। ২০১৭ সালের আগে এ সংখ্যা ছিলো সর্বোচ্চ ২ জন।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সচিবালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান।
তিনি বলেন, বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকতে পারেন। এটা পরিবর্তন করে এখন সর্বোচ্চ তিনজন করা হয়েছে।
সংশোধনীতে বলা হয় একই সঙ্গে ব্যাংক থেকে পরিচালক পরিবারের সদস্যদের জামানতবিহীন ঋণ দেয়া যাবে না।
ধারনা করা হচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যথেচ্ছ হারে ঋণ নেয়া ও তা খেলাপী হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের শর্ত মানতে এ সংশোধনী আনা হলো।
কবে থেকে এ আইন কার্যকর হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, এটি আজ (মঙ্গলবার) মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন সংসদে যাবে, সেখানে আইনটি পাস হলে তারপর কার্যকর হবে। তবে সেখানে সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটি এটি যাচাই বাছাই করবে। প্রয়োজনে কিছু বিষয় সংযুক্ত বা বিযোজিত করতে পারবে।
ব্রিফিংয়ে সচিব বলেন, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋণ প্রদান ও জামানত গ্রহণ এ বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংক কোনো পরিচালক বা পরিচালকের পরিবারের সদস্যকে জামানত ব্যতিত কোনো ঋণ বা অগ্রিম মঞ্জুর করতে পারবে না। এছাড়া পরিচালক বা পরিচালকের সদস্যদের দায় নেওয়ার ভিত্তিতে জামানতি ঋণ, অগ্রিম ঋণ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা দেবে না। যেই হোক না কেন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে কো-লেটারেল থাকতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সবার ক্ষেত্রে। এছাড়াও একই ব্যাংক কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা ফাউন্ডেশন যেন বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত পরিদর্শন করতে পারে সেই ধারা নতুন সংযোজন করা হয়েছে।
মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ভিত্তিতে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মোট ৩৪টি ধারণা রয়েছে। এখানে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কারা, তার একটা সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ, অগ্রিম বা বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধার অংশ বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করে, তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে।
তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের নামে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টিকেও ইচ্ছাকৃত খেলাপির আওতায় আনা হয়েছে। একইসঙ্গে যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেওয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ব্যবহার না করলেও ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) এর কাছে কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হিসেবে পরিগণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।
সচিব বলেন, নোটিশ দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণখেলাপি তার কাছে পাওনা টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা যাবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণখেলাপির তালিকা না পাঠায, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। তারপরও যদি ব্যাত্যয় অব্যাহত থাকে তাহলে প্রতিদিনের জন্য এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা যাবে।