রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল ইসলামকে মারধরের হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদের বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার রাতে এই ঘটনার পর দেশীয় অস্ত্রের মহড়া করেছে সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীরা। দিবাগত রাত দেড়টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে জড়ো হন তাদের অনুসারী বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা। এ সময় অনেকের হাতে রড, স্টাম্প ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান চালালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। অভিযান শেষ হলে ভোর সাড়ে চারটার দিকে নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল ছাড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, নিয়াজ মোর্শেদ ও তার সহযোগীরা হলে অবস্থান করছেন এমন খবর পেয়ে রাত দেড়টার পর থেকেই মাদার বখ্শ হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রায় সবার হাতেই রড, স্টাম্প ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ছিল। এতে প্রাথমিক অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হলের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিককে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক সেখানে উপস্থিত হন। এছাড়া দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের এই প্রতিনিধি রাতভর ঘটনাস্থলে সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন।
রাত তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সউদ, জনসংযোগ প্রশাসক (পিআরএ) অধ্যাপক প্রণব কুমার পাণ্ডে, সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক সোহরাওয়ার্দী হলে বহিরাগত ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে একটি চক্র ক্যাম্পাসের পরিবেশকে অস্থিতিশীলের চেষ্টা করছে বলেও জানান। পরে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান চালায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাদার বখ্শ হলের সামনে অবস্থান নেয়। পরে ভোর সাড়ে চারটার দিকে অভিযান শেষ হলে ঘটনাস্থল ছাড়ে তারা। এ সময় আশেপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ডিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের দেখা গেছে। তবে নিয়াজ মোর্শেদ বা তার অনুসারী কাউকে হলে বা তার আশেপাশে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: “একপক্ষকে তথ্য দিয়ে” মার খেলেন নিরাপত্তাকর্মী
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব সাংবাদিকদের বলেন, “জোহা হল ও মাদার বখ্শ হলের ছাদ থেকে আমার নেতাকর্মীরা নিয়াজকে বহিরাগতসহ ডাইনিংয়ের ছাদ দিয়ে হলে ঢুকতে দেখে। বিষয়টা আমি জানতে পেরে প্রক্টর স্যারকে অবহিত করি। পরে প্রক্টর পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় হলে অভিযান চালায়।”
বিষয়টি জানতে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
প্রায় দুই ঘণ্টা সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান শেষে ভোর পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি সূত্র থেকে হলে বহিরাগত ঢোকার পেয়ে হলে তল্লাশি চালাই। এ সময় আমরা একটি চাইনিজ কুড়ালের অংশবিশেষ পেয়েছি। বেশ কিছু সন্দেহজনক কক্ষে অভিযান চালাই। এ সময় আমরা কিছু অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পাই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হল প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
হলের বাইরে এক পক্ষের নেতাকর্মীরা রড, পাইপ ও দেশীয় অস্ত্রের মহড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের চোখে এখনও এমন দৃশ্য পড়েনি। হলে যেহেতু পদের বিষয় আছে। মানে রাজনীতির বিষয়টা থাকায় আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছি।”
ঘটনার প্রেক্ষাপট
গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্ট রুমে বসাকে কেন্দ্র করে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক।
আতিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী হওয়ায় সভাপতির নেতাকর্মীরা আতিকের পক্ষে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারীরাও।
অন্যদিকে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পদবঞ্চিত নেতা শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনকে নিয়াজ মোর্শেদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। এদিন রাত ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ স্তিমিত হয় রাত তিনটার দিকে। এ সময় উভয় পক্ষকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। এছাড়াও নেতাকর্মীদের হাতে রাম দা-রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। সংঘর্ষকালীন ছয়টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে।