জুলাই ১৩, ২০২৪, ১২:৪২ এএম
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে অনড় অবস্থান প্রকাশ করে আন্দোলন অব্যহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। হাইকোর্টের যে রায়ের প্রতিবাদে চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’, এরই মধ্যে সেই রায়কে ৪ সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই অনুযায়ী এখন কোটা পদ্ধতির কোনও কার্যকারিতা নেই। কিন্তু তারপরও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ ও এর আশপাশ এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: সমন্বয়কদের নিয়ে অনলাইন-অফলাইনে প্রতিনিধি বৈঠক আগামীকাল
এদিকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দেওয়ার পরেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আন্দোলনের এই হুঁশিয়ারিকে ‘হঠকারিতা’ হিসেবে দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেও কোটাবিরোধী আন্দোলন অযৌক্তিক: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে বলেছেন, যেকোনও আন্দোলন হলেই বিএনপি-জামায়াত ও তাদের দোসররা সেটাকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। এখন তারা কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ তাদের ওপর জনগণের কোনও আস্থা নেই।
কোটা বাতিলের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।
এর আগে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে শাহবাগে জড়ো হন।
টানা ৪ ঘণ্টাব্যাপী রেলপথ অবরোধের পর রাত নয়টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। তারা রেলপথের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রেলপথ অবরোধ তুলে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “আমাদের কর্মসূচি রাত ১০টা পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সবার কর্মসূচি শেষ করায় আমরা ১০টার বদলে রাত নয়টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের অবরোধ কর্মসূচির কারণে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। যা স্বাভাবিক হতে রাত ১২টা পর্যন্ত বেজে যাবে। এদিক থেকে আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে।”
চট্টগ্রামের চকবাজার থেকে চট্টগ্রাম কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ হয়ে জামালখানের দিকে ১০ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে লংমার্চ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জামালখান থেকে কাজির দেউড়ি, লালখানবাজার, ওয়াসা, জিইসি মোড় প্রদক্ষিণ করে দুই নম্বর গেট এলাকায় এসে এই লংমার্চ শেষ হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও এর অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে এই লংমার্চ কর্মসূচি পালিত হয়।
শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে আসা শাটল ট্রেন নগরীর ষোলশহর স্টেশনে পৌনে পাঁচটার দিকে পৌঁছানোর পর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে বিকেল থেকেই নগরীর বিভিন্ন কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ষোলশহর স্টেশনে জড়ো হতে থাকেন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নজরুল হলে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মিছিলে কোটার পক্ষের শিক্ষার্থীদের বাধাদানের ভিডিও করায় এক শিক্ষার্থীকে তুলে হলে নিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটছে। আহত অবস্থায় তাকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী হলেন মো. তামিম হোসেন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
আহত ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান, শুক্রবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ডাকা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে যোগ দেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্ররা। কুমিল্লা সদরের ধর্মপুর এলাকায় কলেজের ক্যাম্পাসে তারা বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহে যান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্যসহ জেলার সাংবাদিকরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য মো. তামিম হোসেন। এ সময় কোটা বিরোধীদের আন্দোলনে বাধা দিতে আসেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখার নজরুল হলের শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী তামিমকে ভিডিও করতে দেখে প্রথমে তার মোবাইল নিয়ে যান হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে তাকে মোবাইল দেবেন বলে হলের দিকে নিয়ে যান তারা। হলের একটি কক্ষে নিয়ে যান তারা। তারপর তার মাথা, হাত, পা ও চোখসহ দেহের বিভিন্ন অংশে আঘাত করা হয়। নির্যাতনের দুই ঘণ্টা পর খবরটি জানতে পারেন কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। এ সময় তারা তামিমকে হল থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে সাধারণ ছাত্রদের তত্ত্বাবধানে তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
আহত তামিম সাংবাদিকদের জানান, “আমার থেকে তারা মোবাইল নিয়ে যায়। পরে আমাকে নির্যাতন করে। তারা আমাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেয়। আমার এখন কিছুই মনে পড়ছে না। আমি শরীরও নাড়াতে পারছি না।”