ভূমিকম্পের কথা কি আগে থেকে মানুষ জানতে পারবে?

বিবিসি

ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ১২:০০ পিএম

ভূমিকম্পের কথা কি আগে থেকে মানুষ জানতে পারবে?

ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটের দিকে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করে ঢাকাবাসী।

মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, অনেকেরই প্রশ্ন থাকে ভূমিকম্পের খবর কি আগে থেকে পাওয়া সম্ভব?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিকভাবে আগে থেকেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া খুবই কঠিন।

যদিও একটি ঘটনা ঘটে যাবার পর প্রায়শই ভূকম্পনজনিত ডেটা বা তথ্যে মিনিটের সংকেত শনাক্ত করা যায়, তবে কী অনুসন্ধান করতে হবে সেটা বোঝা এবং পূর্বাভাস দেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।

ইতালির রোমের সেপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানের এবং যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ম্যারোন বলেন, "যখন আমরা পরীক্ষাগারে ভূমিকম্পের পরীক্ষা চালাই তখন আমরা এই সমস্ত ব্যর্থতা দেখি- যেখানে প্রথমে কিছু ফাটল এবং কিছু ত্রুটি দেখা যায়।"

"কিন্তু প্রকৃতিতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকায় আমরা প্রায়শই বড় ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাই না।"

অন্তত ১৯৬০ সাল থেকে ভূতত্ত্ববিদরা ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পাওয়ার জন্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করে গেলেও, তাতে সামান্য সফলতাই পেয়েছেন।

ক্রিস ম্যারোন বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ হল বিশ্বের বিভিন্ন দিক দিয়ে যাওয়া চ্যুতিগুলোর জটিলতা।

এছাড়াও পৃথিবীর অভ্যন্তরে অনবরত সংঘর্ষের কারণে প্রচুর পরিমাণে আওয়াজ হয় এবং এটি বেশ গর্জন করতে থাকে। এগুলো আবার রাস্তার ট্র্যাফিক, নির্মাণ কাজ এবং দৈনন্দিন জীবনের কোলাহলের সাথে মিশে যাওয়ায় সেখান থেকে ভূমিকম্পের স্পষ্ট সংকেত বাছাই করা কঠিন হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, একটি সত্যিকারের ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরি- এটি কোথায় ঘটবে, কখন ঘটবে এবং কত বড় আকারের হবে।

সংস্থাটি বলছে, এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে এটি করতে পারে না।

তার বদলে ভূতত্ত্ববিদরা তাদের সেরা অনুমান দিয়ে ‍‍`প্রাকৃতিক বিপদ মানচিত্র‍‍` তৈরি করে, যেখানে তারা কয়েক বছরের সময়সীমার মধ্যে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা হিসেব করে।

এগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তোলা দালানের মান উন্নত করার মতো পরিকল্পনায় কিছুটা সাহায্য করতে পারলেও জনসাধারণকে সরিয়ে নেয়া বা নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার মতো প্রাথমিক সতর্কতা নিতে প্রয়োজনীয় পূর্বাভাস দেয় না।

তাছাড়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে থাকা সব বাসিন্দার প্রচুর পরিমাণে কম্পন সহ্য করতে পারা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানের সামর্থ্যও নেই।

ম্যারোন বলেন, "তুরস্ক এবং সিরিয়ায় এমন অনেক বিষয় ছিল যার ফলে ভবনগুলো একরকম ভেঙ্গে পড়ার অবস্থায় ছিল”।

"পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের ভূকম্পন কোড রয়েছে যা ১৯৭০ এবং ৮০’র দশকে প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সেভাবে ভবন তৈরি করতে কিংবা পুরনো ভবনে নতুন পদ্ধতি যুক্ত করতে অনেক খরচ হয়।"

তাই এর পরিবর্তে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস আরও সঠিক করার উপায় অনুসন্ধান করছেন। ভূকম্পনের সতর্কতার পাশাপাশি প্রাণীদের আচরণ থেকে শুরু করে পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে বৈদ্যুতিক বিশৃঙ্খলা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় গবেষকরা এসংক্রান্ত সূত্র খুঁজছেন।

তবে সম্প্রতি মানুষ যে সূক্ষ্ম সংকেত ধরতে পারে না তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে শনাক্তের বিষয়ে এক ধরনের উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।

মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদম বা গাণিতিক পরিভাষাগুলো অতীতের ভূমিকম্প সংশ্লিষ্ট তথ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন নমুনা অনুসন্ধান করে যা ভবিষ্যতে এসব ঘটনার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ম্যারোন বলেন, "এই ধরনের মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদমের পূর্বাভাস অনেক আগ্রহ তৈরি করেছে," তিনি ও তার সহকর্মীরা গত পাঁচ বছর ধরে এমন গাণিতিক পরিভাষা তৈরি করছেন যা পরীক্ষাগারে কৃত্রিম ভূমিকম্পের ত্রুটি শনাক্তে সক্ষম।

মুষ্টি আকারের গ্রানাইটের টুকরো ব্যবহার করে তারা পুনরায় চাপ ও ঘর্ষণ তৈরি করেন যা একটি চ্যুতিতে ঘটতে পারে। ফল্ট বা চ্যুতি ফসকে না যাওয়া পর্যন্ত এই চাপ তৈরি করা হয়, যাকে তারা বলেন "ল্যাবকোয়েক্স”।

"স্থিতিস্থাপক তরঙ্গগুলো চ্যুতির মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করে যাতে এটি ধীরে ধীরে ভেঙে যায়," বলেন ম্যারোন।

"স্থিতিস্থাপক বৈশিষ্ট্যের এই পরিবর্তন এবং চ্যুতি অঞ্চলে ফোরশক বা মৃদু কম্পন থেকে আসা শব্দের উপর ভিত্তি করে পরীক্ষাগারে কখন চ্যুতি ঘটবে তা আমরা আগেই বলতে পারি। এটিকে আমরা পৃথিবীতেও প্রয়োগ করতে চাই, তবে এখন পর্যন্ত সেই সক্ষমতা হয়নি।"

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই আগাম পূর্বাভাসের শক্তিকে বাস্তব-বিশ্বের চ্যুতি অঞ্চলের বৃহত্তর এবং জটিল পরিবেশে স্থানান্তর করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।

Link copied!