এডিস মশার কামড়ে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা একটু কমলেও গত ২২ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে চলতি বছরে। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫৭ জন
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এনিয়ে চলতি বছর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ হাজার ২৭৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৯৫ জন।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ডেঙ্গু রোগী গণনা শুরু হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। আর ডেঙ্গু রোগী হিসেবে শনাক্ত হেন ৫ হাজার ৫৫১ জন।
প্রতিবছর বর্ষাকালেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। আর আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের বেশি। তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গু কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। ওই বছর এ সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর’র দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে সারাদেশে প্রাণ যায় ৯৩ জনের। ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৫৮, ২০০৩ সালে ১০ জন মারা যান। তবে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি হয়নি বলে আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, চার বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে ছয়জন, ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে আটজন এবং ২০১৮ সালে ২৬ জন ডেঙ্গুতে মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়া ১৫৭ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে রাজধানীর ৪৬ টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২২ জন। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৭৫৮জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৬০১ জন এবং অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে সর্বমোট ১৫৭জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৪ হাজার ২৭৭ জনের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ২৩ হাজার ৪২৪ জন।
এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যু হয়নি। চলতি বছরের জুলাই মাসে ১২ জনের মৃত্যু হলেও পরের এক মাসেই (আগস্ট) ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ৯৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর নভেম্বরে ৪ জন, অক্টোবরে ২২ জন, সেপ্টেম্বরে ২৩ জন, আগস্টে ৩৪ জন এবং জুলাইতে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে।