গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার জবাবে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। প্রথমবারের মতো ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরানের ভূমি থেকে চালানো ড্রোন এবং ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিতে ইসরায়েলও পাল্টা তাদের সৈন্য নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে তৈরি হয়েছে যুদ্ধংদেহী পরিস্থিতি।
অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরাইল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হলেও সম্প্রতি ইরানও সামরিক সক্ষমতা এগিয়ে নিয়েছে অনেক দূর। চিরবৈরী এই দুই দেশের মধ্যে সামরিক শক্তির ব্যবধান কম থাকায় এই অভিজান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে সৃষ্টি করেছে চরম উত্তেজনা। এবার প্রশ্ন সামরিক শক্তির বিচারে কারা এগিয়ে? ইরান নাকি ইসরায়েল?
পরিসংখ্যান বলছে সক্ষমতার দিক থেকে ইসরায়েলের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে ইরান। সামরিক সক্ষমতায় কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে তারা সামরিক শক্তির তালিকা তৈরি করতে বাস্তবভিত্তিক ৫৫ টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়। এর মধ্যে রয়েছে একটি দেশের আধুনিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, দেশটির জনসংখ্যা প্রভৃতি।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেট হলো ২ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার। অন্যদিকে ইরানের বাজেট ৯৯৫ কোটি ডলার। এই র্যাংকিংয়ে ১৪৫ দেশের মধ্যে ইরান ৩৩তম এবং ইসরায়েল ১৯তম অবস্থানে আছে।
তবে সৈন্য সংখ্যার হিসাবে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। দেশটির মোট সেনা সদস্য ৯ লাখ ৬০ হাজার। অন্যদিকে ইসরায়েলে এই সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ৩৫ হাজার।
আয়তনের দিক থেকেও ইরান ইসরাইলের চেয়ে ১০০ গুণ বড়। পারস্য উপসাগরের এই দেশে আছে তেল গ্যাসের বিশাল ভাণ্ডার। তবে ধারণা করা হয় ইসরায়েলের তুলনায় ইরানের অধিক জনসংখ্যা কিংবা বিশাল সেনাবাহিনী থাকালেও যুদ্ধ একবার বেঁধে গেলে ইরানকে এগুলো খুব একটা সুবিধা দেবে না। কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের কোনো সীমান্ত নেই। তাই ইরানের সেনা সদস্যরা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকতে পারবে না।
ফায়ার ফোর সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম। ইরানের নিয়মিত সেনা ৬ লাখ ১০ হাজার। আর ইসরায়েলের নিয়মিত সেনা রয়েছে মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার।
ইরানের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১১৬টি এবং ইসরাইলে আছে ২৪১টি। তাই বহরে থাকা যুদ্ধ বিমানের সংখ্যার দিক থেকে আবার ইরানের চেয়ে দ্বিগুণ এগিয়ে ইসরাযেল।
আধুনিক সময়কালে যুদ্ধ ট্যাংক গুরুত্ব অনেক সে হিসেবে ইরানের ট্যাংক সংখ্যা ১ হাজার ৯৯৬টি আর ইসরায়েলের ট্যাংক আছে ১ হাজার ৩৭০টি সেই হিসাবে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান।
ইরানে হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১২৯টি যা ইসরায়েলের আছে ১৪৬টি। এছাড়া শুধু হামলায় ব্যবহৃত ইরানের হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১৩ ও ইসরায়েলের ৪৮। ইরানের চেয়ে যা ইসরায়েলের তিনগুণ বেশি।
এছাড়া মোট সামরিক উড়োজাহাজ ইরানের ৫৫১টি, ইসরায়েলের ৬১২টি ও যুদ্ধবিমান ইরানে রয়েছে ১১৬টি। অন্যদিকে ইসরায়েলে এর সংখ্যা ২৪১টি যা ইরানের দ্বিগুণ। হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান ইরানের আছে ২৩টি এবং ইসরাইলের আছে ৩৯টি। এছাড়া পরিবহন উড়োজাহাজ ইরানের আছে ৮৬টি। কিন্তু ইসরায়েলের আছে মাত্র ১২টি।
ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক বোমা থাকলেও এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনোকিছু জানায়নি দেশটি। আর ইরান যে পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে- এটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। যদিও গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারে এসব বিষয়ে নেই কোনো সন্তোষজনক তথ্য।