ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ‘ডিপ স্টেটের’ ভূমিকার যে কথা চাউর হয়েছে, তা সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনেএক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখানে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না।”
‘ডিপ স্টেট’ কী, কিভাবে এটি কাজ করে
ডিপ স্টেট বা ছায়া রাষ্ট্র বলতে সাধারণত অনির্বাচিত সরকারি কর্মকর্তা ও প্রাইভেট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কথিত গোপন নেটওয়ার্ককে বোঝানো হয়ে থাকে, যারা বেআইনিভাবে সরকারি নীতিতে প্রভাব বিস্তার ও তা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে।
সরকারি নীতিতে এমন প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ডিপ স্টেটকে প্রায়ই দায়ী করে থাকেন ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। কথিত ডিপ স্টেট বিরোধী প্রচারণার অগ্রভাগে রয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনে প্রভাবশালী পদে থাকা বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক।
বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘জাতীয় স্বার্থ’ দেখা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়ন ও কার্যক্রমে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ট্রাম্প।
ইউএসআইডির বিষয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ এমন সময়ে আসে, যখন বাংলাদেশে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর আসা মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের পক্ষে যুক্তি দেখানোর সময় দেশটিতে দক্ষিণপন্থিদের বক্তব্যে ‘সাম্প্রতিক ঘটনা’ হিসাবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও ঘুরে ফিরে আসছে।
এই প্রচারণায় উদাহরণ টেনে বলা হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে ‘ক্ষমতা পরিবর্তনে’ অর্থায়ন করেছে ইউএসএআইডি। ‘গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করার’ জন্য ট্রান্সজেন্ডার ও র্যাপারদের অর্থায়ন করার কথাও সামনে আনা হচ্ছে।
এর মধ্যে ৩০ জানুয়ারি হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী জর্জ সরোসের ছেলে অ্যালেক্স সরোস ঢাকা সফরে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। সরোস ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনেরও চেয়ারম্যান।
ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিষয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের আদালতে ঘুষের অভিযোগ আনার মাসখানেক পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি ‘ভারতকে অস্থিতিশীল’ করার অভিযোগ এনেছিল ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।
এক্ষেত্রে জর্জ সরোস, মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’, মিডিয়া গ্রুপ ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ (ওসিসিআরপি) ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়- একদল অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একযোগে কাজ করছে বলে অভিযোগ তুলেছিল নরেন্দ্র মোদীর দল।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ও ডিপ স্টেটের ভূমিকা
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্প-মোদী বৈঠকের পর যৌথ ব্রিফিংয়ে ডিপ স্টেটের প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিমত জানতে চান এক ভারতীয় সাংবাদিক।
প্রথমে ওই সাংবাদিক মোদীর কাছে হিন্দিতে জানতে চান, ইউক্রেইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারতের ভূমিকার বিষয়ে। এরপর ট্রাম্পের উদ্দেশে ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন তিনি।
ট্রাম্পকে ওই সাংবাদিক বলেন, “আপনি বাংলাদেশ বিষয়ে কী বলতে চান? কেননা আমরা দেখেছি এবং এটা স্পষ্ট যে, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট ক্ষমতার পরিবর্তনে জড়িত ছিল; এরপর জুনিয়র সরোসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। সুতরাং বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?”
উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “সেখানে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না। এটা এমন একটা বিষয়- যেখানে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।”
এরপর নরেন্দ্র মোদীর দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, স্পষ্ট করে বললে, ভারত সেখানে শতশত বছর ধরে কাজ করেছে, আর সেসব বিষয় তিনি পড়েছেন।
“তবে বাংলাদেশের বিষয় আমি প্রধানমন্ত্রীর উপর ছেড়ে দিব,” বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইশারা দেন ট্রাম্প।
নরেন্দ্র মোদী উত্তর দিতে গিয়ে ইউক্রেইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরলেও বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।