ওয়ারীতে ১৪টি রেস্টুরেন্টে কোথাও সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার, কোথাও রান্না করার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র যত্রতত্র রাখা হয়েছে। কোনো রেস্টুরেন্টে নেই জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি। অনেকগুলো আবার পরিচালিত হচ্ছে আবাসিক ভবনেই। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিটের এসব রেস্টুরেন্টে পুলিশের অভিযানে এই চিত্র উঠে এসেছে। বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকি নিয়ে এসব রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা জানায়, বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। নেই জরুরি বহির্গমনেরও পথ। এমনও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে রান্নাঘর থেকে অন্তত তিনটি দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে আসতে হয়। সেখানে আগুন লাগলে কেউ বেরিয়ে আসতে পারবেন না। আছে হতাহতের আশঙ্কা।
এদিকে রাজধানীর জিগাতলায় সাতমসজিদ সড়কের পাশে ১৫তলা কেয়ারি ক্রিসেন্ট প্লাজা ভবনে অভিযান করে পুলিশ। ওই ভবনের দুটি সিঁড়ির মধ্যে একটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। যা দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকি বহন করে। পাশাপাশি ধানমন্ডিতেই গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে একটি রুফটপ রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই ভবনে থাকা ১১টি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
টুইন পিকে অভিযান শেষে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার বলেন, ‘রেস্টুরেন্টটিতে অভিযান করার পর তা সিলগালা করে দিয়েছি, ইলেক্ট্রিক কানেকশন বন্ধ করে দিয়েছি। মূল কথা হলো, টোটাল রেস্টুরেন্টটা বন্ধ করে দিয়েছি।’
ওয়ারীতে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে ইকবাল নামে ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের পরিবেশ অনেক ভালো। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের যে বিল্ডিংটা দেখলাম, সেটা এখনও তৈরিই হয়নি। আপনারাও দেখেছেন আন্ডারকন্সট্রাকশন রয়েছে। একই সঙ্গে দেখেন, বিল্ডিংয়ের দোতলায় বেশ কয়েকটা প্রসাধনীর দোকান রয়েছে, বেশ কিছু কাপড়চোপড়ের দোকান রয়েছে। তার মধ্যে একটা কাচ্চি ভাইয়েরও একটা রুম আছে। একই জায়গায় দেখেন, ইলেক্ট্রিক কাজ চলছে, রাজমিস্ত্রীর কাজ চলছে, টাইলস মিস্ত্রীর কাজ চলছে। পাশাপাশি রান্নাও চলছে, খাওয়াদাওয়াও চলছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বিল্ডিংয়ের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলবো। আমরা মালিক ও ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। পরবর্তীতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’
এর আগে গতকাল রোববার (৩ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গুলশান, ধানমন্ডি, ওয়ারী, মিরপুর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকায় এরই মধ্যে প্রায় ৫০টি রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
অনিয়মের অভিযোগে পৃথক পৃথক অভিযানে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গতকাল ধানমন্ডিতে ১৯টি, উত্তরায় ২০টি, গুলশানে ১০টি রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকানে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযান চলাকালীন ধানমন্ডিতে গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের রুফটপ রেস্টুরেন্ট ভেঙে ফেলা হয়েছে। একই সঙ্গে কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনও সিলগালা করেছে ডিএমপি। এছাড়া ধানমন্ডিতে একটি দোকানের মালিককে জরিমানা ও পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে।