“শয়তানের নিঃশ্বাস” প্রতারণা চক্রের নতুন অস্ত্র

তাসনিম তাজিন

মে ৪, ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম

“শয়তানের নিঃশ্বাস” প্রতারণা চক্রের নতুন অস্ত্র

জবরদস্তি কিংবা বাধ্য করা নয়। নিজের মুঠোফোন, গহনা, অর্থ, সম্পদ স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিচ্ছেন অপরিচিত কোনো নারী-পুরুষের হাতে। বিষয়টি অস্বাভাবিক হলেও গত কয়েক বছরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘটেছে এমনই ঘটনা।

দেশে ছিনতাইকারী ও প্রতারক চক্রের সদস্যরা কাজ হাসিলে ব্যবহার করছে এমন একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ, যার মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য সম্পূর্ণভাবে ভিক্টিমের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায়।

স্কোপোলামিন নামে এই ড্রাগ প্রতারক জগতে “ডেভিলস ব্রেথ” কিংবা “শয়তানের নিঃশ্বাস” হিসেবে পরিচিত। বুলগ্যামেন্সিয়া নামের একধরনের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের রস থেকে তৈরি করা হয় এই মেক্সিকান ড্রাগ।

ডেভিলস ব্রেথ ব্যবহার করে ছিনতাই করতেও প্রতারকরা তাদের সেই প্রচলিত রীতি ব্যবহার করে। সাধারণত টার্গেট করা নারী কিংবা পুরুষের কাছে কাগজে লেখা ঠিকানা, মুঠোফোনের নম্বর দেখিয়ে বিভিন্ন সহায়তা চাইতে থাকে প্রতারক দলের সদস্যরা। তবে এসব কাগজ, মুঠোফোন বা নির্ধারিত বস্তুতে মেশানো থাকে স্কোপোলামিন মাদক।

এই মাদকের প্রভাব ও ভয়াবহতা পুরনো ব্যবহৃত মাদকের চেয়ে অনেকটাই বেশি। নিঃশ্বাসের সঙ্গে এমনকি মুখের ফুঁ’র মাধ্যমেও সহজেই স্কোপলামিন ড্রাগ পৌঁছে যায় ভিক্টিমের মস্তিষ্কে। মুহূর্তেই ভিক্টিমের মস্তিষ্ক বশ করে ফেলে প্রতারকরা।

প্রতারকের কথা মতো নিজেদের সর্বস্বও বিলিয়ে দিতে রাজি থাকেন ঘটনার শিকার হওয়া যেকোনো ব্যক্তি। মস্তিষ্কের এই অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা স্থায়ী হতে পারে কয়েক মিনিট থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।

সাধারণত চলতি পথে, হাসপাতাল, শপিং মল এমনকি বাসা-বাড়িতেও শয়তানের নিঃশ্বাসের ফাঁদে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ঢাকা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, খুলনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় ছিনতাইকারীরা ব্যবহার করছে ডেভিলস ব্রেথ ড্রাগ।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী  স্কোপোলামিন ড্রাগ বেচাকেনা ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা বেশ কিছু প্রতারক চক্র দলের সদস্যকে আটক করলেও এর দুর্ভোগ থেকে এখনো রেহাই পায়নি সাধারণ মানুষ।

এমনকি অনলাইনেও অবাধে চলছে ডেভিলস ব্রেথ মাদকের অবাধ বেচাকেনা।

মস্তিষ্কে এই মাদকের পরিমান মাত্রাতিরিক্ত পৌঁছে গেলে ভুক্তভোগীর মস্তিষ্ক বিকৃতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি পথে সতর্ক থাকতে মাস্ক ব্যবহার করা, অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা না বলা, সন্দেহজনক মনে হলে দ্রুত সরে যাওয়া ও ঘটনার স্বীকার হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই শ্রেয়।

Link copied!