এপ্রিল ৭, ২০২৪, ১০:১৩ এএম
সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যা করা দরকার তাই করা হবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
রোববার (৭ এপ্রিল) কুকি-চিনের হামলার পর বান্দরবান পরিদর্শনকালে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা খুবই পরিষ্কার। বাংলাদেশের জনগণের শান্তির জন্য, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য যা করণীয়, প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, সেটাই করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা বাস্তবায়নে সক্ষম হবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
বান্দরবানে ব্যাংকে সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সবখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘এই আতঙ্ক দূর করার জন্যই তো আমরা সশরীরে এখানে এসেছি এবং যা আমাদের করণীয় সর্বাত্মকভাবে করেছি। যা আপনারা এরই মধ্যে বোধহয় জেনেছেন। গতকাল রাতে কিছু সন্ত্রাসীকে ধরতে সক্ষম হয়েছছে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কাছ থেকে কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদেরকে শুরুতে আমরা কিছুটা বিশ্বাস করেছিলাম। শান্তি আলোচনা হচ্ছে। যেহেতু শান্তি আলোচনা শেষ হয়নি, সেহেতু শান্তির ভেতরেই শেষ হবে। কিন্তু এর ভেতরেই অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ জনগণের ভেতর শান্তি ফিরে আসবে। তারা দেখতে পারবে যে সন্ত্রাসীদের কোনো জায়গা বাংলাদেশে নেই এবং বাংলাদেশে প্রতিটি অর্গ্যান, আমি সেনাবাহিনীর পক্ষে বলতে পারি, সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ রকমের সক্ষম এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইনশাআল্লাহ।’
অভিযান চলমান রয়েছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি তো, এটা একটা সমন্বিত প্রচেষ্টা। গোয়েন্দারা কাজ করছেন। তাদের ক্ষেত্র থেকে যেটা করণীয় সেটা করছে। বিজেপির যে কাজ করণীয়, তাদের যে কাজ, তারা সেটা করছে। র্যাবের যেটা করণীয় সেটা তারা করছে। পুলিশের যেটা করণীয়, পুলিশ সেটা করছে। আনসার-ভিডিপির যেটা করণীয়, তারা সেটা করছে। সেনাবাহিনীর যা করণীয় সেনাবাহিনী তা করছে। সবকিছুর আমরা আবার সমন্বয় করছি একসঙ্গে। এটা কোনো আইসোলেটেড অপারেশন হচ্ছে না। সবাই সমন্বিতভাবে হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, এখানে আমরা গভর্নমেন্ট (সরকার) যেটা চাইছে, গভর্নমেন্টের ওভারঅল স্ট্র্যাটেজির (সরকারের সার্বিক কৌশল) ভেতর থেকে আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতে পারবো বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছি।’
ব্রিফিংয়ে জরুরি অপারেশনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাপ্রধান বলেন, ‘জরুরি অপারেশন, বুঝতে হবে, আমরা কি কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি? এখন যদি ওখানে একটা ফোর্স ডিফেন্স নিয়ে থাকতো, আমি যেয়ে অ্যাটাক (হামলা) করে দিলাম। এরকম কেউ ডিফেন্স নিয়ে কোথাও আছে?’
নাথান বম এখন কোথায় আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে বক্তব্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে। যারা দিচ্ছে তাদের মধ্যে আমি আবার অন্য একটা বক্তব্য দিয়ে অন্য কিছু মানে পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চাই না। যার যেটা কনসেন্ট সেটা তার কাছ থেকে জানবেন।’
নাথান বমের উত্থানের ব্যাপারে আগাম কোনো তথ্য ছিল কিনা ব্রিফিংয়ে শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগাম তথ্য থাকলে তো আমরা ডেফিনিটলি ব্যবস্থা নিতাম। আমরা তো তাদেরকে বিশ্বাস করেছি। তারা তো দুইবার বসেছে শান্তিচুক্তিতে। তৃতীয়বারও বসার কথা। তারা কি কোনো সময় বলেছে, না এটা হবে না। আমরা এটা করছি না। মানি না। ৩১ তারিখে (৩১ মার্চ) ইস্টার সানডে সেলিব্রেট করার জন্য আমাদের তত্ত্বাবধানে এই রোমা জোনেই ৩৮টি কেক বিভিন্ন চার্চে আমরা দিয়েছি। খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতি, ৩১ তারিখে বেথেলপাড়ার ভেতরে যে আমরা (৩৮টি কেক) দিয়ে আসলাম, দুই তারিখে (২ এপ্রিল) এই ঘটনা। আপনি বন্ধুত্ব, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আপনি কিছু করলে, মনের ভেতরে তো আর ঢোকা যায় না। তো ভেতরে কোনো কিছু ষড়যন্ত্র হলে এই একটা আমার মনে হয়, এটা যেটুকু আমি শুনছি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে, যেটা (হলো) সবাই এগুলোতে জড়িত নয়। কিছু শান্তি চায়, কিছু কিছু আছে তারা শান্তি চায় না। সেগুলোকে এলিমিনেট করা হবে।’
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক উল্লেখ করেন যে ফেসবুক পেজে তারা বারবারই উল্লেখ করছে যে শান্তিচুক্তির আদলে প্রশাসনই তাদেরকে উসকে দিচ্ছে। সাংবাদিকের এমন কথার আলোকে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি যখন কোনো অপকর্ম করবেন, তখন তো আপনার চেষ্টাই থাকবে যে দোষটা অন্যের ঘাঁড়ে দিয়ে দেওয়ার। আপনারাই তো সঠিক জিনিসটা দেখতে পাচ্ছেন। আমি যেগুলো বলেছি, সেগুলো তো কোনো কিছু গল্প বা অন্য কিছু না। সবই তো বাস্তব কাহিনী বললাম। যেটা ঘটেছে, সেটাই বলেছি।’
তাদের সরে যাওয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘সেটা তারাই বলতে পারবে। আমি এক্সাক্টলি (সঠিকভাবে) জানি না। কেন সরে যেতে চাইছে? কি হচ্ছে? কিন্তু এ বিষয়ে যখন ফারদার (আবারও) আমাদের কাছে আরও ইনফরমেশন (তথ্য) থাকবে, তখন দেওয়া হবে।’
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বান্দরবান থেকে সেনাবাহিনীর ১৩০টি ক্যাম্প সরিয়ে ফেলার সুযোগ নিয়েছে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সুযোগ তো কিছুটা তারা নিয়েছেই। আমরা আবার যেসব জায়গায় কিছু কিছু গ্যাপ হয়ে গেছিল, কিছু কিছু ফিলআপ করছি। যখন পরিস্থিতি অশান্ত হয়, তখনই সেনাবাহিনীর দরকার। শান্তির ভেতর সেনাবাহিনীর কি দরকার? যখন শান্তি থাকবে তখন অসামরিক পরিবেশ, অসামরিক প্রশাসন তারা সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করবে, প্রতিটা জায়গায় যা হচ্ছে তাই হবে।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, ‘এসব দৈনন্দিন কাজ তো সেনাবাহিনীর না। যদি অশান্ত হয়, তখন আমাদের দরকার হবে।’
কেএনএফের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিনা এবং অপারেশন করতে গিয়ে সেনাবাহিনী কী ধরনের প্রতিকূলতা পার করেছে ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্ন করা হলে সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে কী ডিফিকাল্টিজ (প্রতিকূলতা) আমরা ফেইস (মুখোমুখি) করছি এবং কীভাবে আমরা তা ওভারকাম (অতিক্রম) করবো, সেটা আপনাদের সামনে প্রকাশ করে মানুষের সামনে অপ্রয়োজনে জানিয়ে দিতে চাই না। এটা আমাদের ভেতরে থাক। যেটা আমাদের কাছ থেকে আপনাদের প্রত্যাশা কি? যে আমরা যাতে দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারি। ইনশাআল্লাহ আমরা সেই দায়িত্ব পালন করবো। সেই কথা আমরা আপনাদের দিচ্ছি। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে ইনশাআল্লাহ। ওটা করবো। কীভাবে করবো, কোন সময় করবো- লেট ইট রিমেইন উইথ আস।’
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে কিনা এমনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। দুটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে কালকে। সেগুলো কেএনএফের কিনা সেগুলো আমি জানি না। আমার মনে হয় যে ওটার প্রক্রিয়া চলছে। ইনশাআল্লাহ উদ্ধার হবে।’