শীতকাল আসে বছরের শেষ ও শুরুতে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শীতকালীন ছুটি ও পরীক্ষা শেষের ছুটি চলতে থাকে। পরিবারের সাথে মিলিয়ে অনেকে অফিস থেকেও ছুটি নিয়ে থাকেন যাতে কিছুদিন ঘুরে আসা যায়। আবার এ সময়টায় বিয়ের নিমন্ত্রণ থাকে বেশ। অন্যদিকে শীত মানেই পিঠাপুলির আয়োজন। এমন আলস্যে ভরা খাওয়া-ঘুমের সময়টায় কিন্তু সমূহ সম্ভাবনা থাকে রক্তে সুগার বেড়ে যাওয়ার।
এছাড়াও চিকিৎসকদের মতে, গরমকালের তুলনায় শীতকালে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শীতে একদিকে তাপমাত্রা কমে যায় অন্যদিকে রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। এর কারণ হলো, ঠান্ডার সময়ে রক্তবাহিকাগুলোর পথ সরু হয়ে আসে। এতে অক্সিজেনের সরবরাহ কমতে থাকে। যার প্রভাব পড়ে রক্তে থাকা শর্করার ওপর। তাই এই সময়ে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে বলেন চিকিৎসকেরা।
যেসব কারণে শীতে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে—
১) আলসেমিতে শরীরচর্চা না করা
শীতের ঠান্ডায় শরীরে আলসেমি চলে আসে। যে কারণে শরীরচর্চা অনেকেই এড়িয়ে যান। এমনকি খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও সঠিক পদ্ধতি মেনে চলেন না। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করে থাকেন তাদের শারীরিকভাবে সক্রিয়তা কমে গেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় না। আর এতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
২) অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ
শীতকাল মানেই বিয়ে-পার্টি-পিঠাপুলির আয়োজনে নিমন্ত্রণ। আর এসব অনুষ্ঠানে খাবারে কোনো ক্যালরির নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ‘রিচ ফুড’ খেয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩) রাতে দেরিতে খাওয়া
আলসেমি করে বা কাজের প্রেসারে রাতে দেরি করে খাবার খেয়ে থাকে অনেকেই। আর বাড়িতে থাকলে বিছানায় গরম কাপড়ের ওম ছাড়িয়ে উঠে খাবার তৈরি করা ও খাওয়া অনেকেই এড়িয়ে যেতে চান বা কোনোমতে দ্রুত খেয়ে নেয়া যায় এমন খাবারকে গুরুত্ব দেন। যে কারণে খাবার থেকে সুগার শরীরের সুগারে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, রাতের খাবার দেরিতে খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের নিয়ন্ত্রণ বিঘ্নিত হয়।
৪) পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
অপর্যাপ্ত ঘুম কিন্তু ইনসুলিন হরমোন উৎপাদন এবং ক্ষরণের হার ব্যাহত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আগে ঘুমের স্বাভাবিক চক্র মেনে চলতে হবে।
৫) মানসিক চাপ
শীতের সময় একান্তই কাজের চাপ না থাকলে বিছানা ছেড়ে উঠতে চান না অনেকেই। বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে বাড়ির বাইরেও বেরুতে চান না। দীর্ঘসময় ঘরে থাকায় বিভিন্ন চিন্তা-উদ্বেগ ও মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। এসব থেকে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই ঘরে-বাইরে নানা রকম পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। শরীরচর্চা, মেডিটেশন— এসবের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।