ছবি: সংগৃহীত
দৈনন্দিন জীবনের কর্মব্যস্ততার কারণে ডোপামিন বাড়া কিংবা শক্তির মাত্রা কমে যেতে পারে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়। দেখা দেয় অবসাদগ্রস্ততা। এমন অবস্থায় অনেকের মাঝে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়, এবং একঘেয়েমি পেয়ে বসে।
২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর আর্টস ইন মেডিসিন’, ‘আমেরিকানস ফর দ্য আর্টস’সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে –বাগান করা বা কারুশিল্পের মতো সৃজনশীল কাজগুলো আত্মতৃপ্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
“একইভাবে শীতের সময় অতৃপ্তিতে ভোগা, আলসেমি বা শক্তির অভাব বোধ করা ইত্যাদির ওপর আমাদের অনুভূতিতে প্রভাব ফেলে”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন নিবন্ধিত মার্কিন মনোবিজ্ঞানি ড. লিয়াহ কেইলর।
ঘুম ও মানসিক আঘাত-বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “বছরের শীতল সময়ে নিজেদের মধ্যে স্বস্তি অনুভব করতে আমরা হয়ত খাবার, সামাজিক যোগাযোগ বা শুধুই এক কাপ অতিরিক্ত কফির ওপর নির্ভরশীল হই। এর প্রধান কারণ হল, মস্তিষ্কের ডোপামিনের মাত্রা শীতল আবহাওয়াতে কমের দিকে থাকে।”
ডোপামিন বলতে যা বোঝায়
“ডোপামিন হল এক ধরনের ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ (রাসায়নিক সংকেত), একে প্রায় সময় ‘ভালো বোধের’ রাসায়িনিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ এটা অনুপ্রেরণা, আনন্দ, খুশির মতো অনুভূতির সাথে সংশ্লিষ্ট”- ব্যাখ্যা করেন ডা. কেইলর।
শীতের সময়, ঠাণ্ডাকালে, দিনের মাত্রা কমলে বা রোদ ওঠেনি ঠিক মতো- এমন দিনে ডোপামিনের মাত্রা কম থাকে। যে কারণে আলসেমি, ক্লান্তি কাজ করে। কোনো কাজে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় না।
যে কারণে হয়ত ডোপামিন বাড়ানোর মতো কার্যকলাপ, যেমন- মজার খাবার খাওয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মজার কিছু খোঁজার মাত্রা বেড়ে যায়।
তবে এই হরমোন বাড়ানোর আরও উপায় রয়েছে।
পরিচিত শখগুলোতে নতুনত্ব দেওয়া
একই জায়গায় একই রকম কাজ করাতে হয়ত একঘেয়ে লাগতে পারে। তবে পুরানো শখগুলো নতুনভাবে করতে পারলে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। কারণ মস্তিষ্ক নতুন কাজ পছন্দ করে।
তাই ড. কেইলর পরামর্শ দেন, “নতুন ‘কফি শপে’ গিয়ে সময় কাটাতে পারেন, চেষ্টা করতে পারেন নতুন কোনো রেসিপি। অথবা সম্পূর্ণ নতুন কোনো দক্ষতা অর্জনের চেষ্টাও করা যেতে পারে। যা কিছু মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে তাতেই তৈরি হবে টাটকা ডোপামিন।”
ঠাণ্ডা স্পর্শের চিকিৎসা
‘কোল্ড এক্সপোজার থেরাপি’ হল এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে দেহে ঠাণ্ডার স্পর্শ দিয়ে চাঙা বোধ করানো হয়।
ড. কেইলর বলেন, “হতে পারে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল বা শীতল জলে ডুব দেওয়া; এর ফলে আমাদের ‘সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম’ (বিশ্রাম ও হজমের স্নায়ুতন্ত্র) দ্রুত কার্যকর হয়ে ওঠে। ফলে ডোপামিনের মাত্রা দ্রুত বাড়ে।”
আর তখন নিজের মধ্যে চাঙা অনুভূতি কাজ করতে থাকে।
নড়াচড়ায় শৈল্পিক ছোঁয়া
জানা কথা ব্যায়ামের মাধ্যমে সুখের হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। তবে ব্যায়ামাগারে যাওয়া অনেকের কাছেই ঝামেলাপূর্ণ মনে হতে পারে।
তাই কেইলর বলেন, “এই জন্য ঘরের বাইরে দড়ি লাফানো যেতে পারে, নৃত্যকলা শেখা যেতে পারে ইউ টিউব দেখে কিংবা হাঁটা যেতে পারে ছন্দের তালে। এগুলো মন, মস্তিষ্ক ও শরীরের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে। ফলে ডোপামিন নিঃসরণ হয়।”
দ্রুতলয়ের সংগীত শোনা
পথেঘাটের শব্দ দূষণ থেকে বাঁচতে হয়ত কানে হেডফোন দিয়ে গান শোনা হয়। তবে এবার না হয় ইচ্ছে করেই দ্রুত লয়ের গান বা সংগীত শোনার শুরু করুন।
কারণ ডা. কেইলর বলছেন, “নিজের পছন্দ মতো দ্রুত লয় বা বিটের সংগীত বেছে নিয়ে শুনতে থাকুন। এটা আপনার মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি করে অনুপ্রেরণা যোগাবে। একইভাবে ধীর লয়ের সংগীত অনুভূতি শান্ত করবে এবং মানসিক চাপ কমাবে।”
পাজল খেলা
বুদ্ধি, ধৈর্য্য জ্ঞান ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য নানান ধরনের ‘পাজল গেইম’ পাওয়া যায়। এই ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করলে ‘ভালো বোধের’ হরমোন নিঃসরণ হয়।
ডা. কেইলর বলেন, “ধাঁধার খেলায় শুধু যে সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতাই বাড়ে তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি পুরষ্কার পাওয়ার অনুভূতি তৈরি হয় যা ডোপামিন নিঃসরণ ঘটায়।”
আলোক চিকিৎসা
দেহে আলোর স্পর্শ নেওয়া জরুরি। এজন্য সকালে কিছুক্ষণের জন্য হলেও রোদ মাখতে হবে গায়ে- পরাশর্ম দেন এই মনোবিজ্ঞানী।
তিনি আরও বলেন, “প্রাকৃতিক আলো গায়ে মাখা জরুরি। তবে অন্ধাকারাচ্ছন দিন হলে ‘ল্যাম্প থেরাপি’ নেওয়া যায়। এজন্য ঘরে উষ্ণ আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। যা ডোপামিন নিঃসরণ বাড়াবে।”