জুলাই আন্দোলনের ‘শহীদ’, হত্যা মামলায় হাসিনা-কাদের আসামি, ৯ মাসে জানা গেল ব্যক্তি জীবিত

জাতীয় ডেস্ক

মে ৩১, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম

জুলাই আন্দোলনের ‘শহীদ’, হত্যা মামলায় হাসিনা-কাদের আসামি, ৯ মাসে জানা গেল ব্যক্তি জীবিত

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে উঠে এসেছে এক বিস্ময়কর ঘটনাএক ব্যক্তি, মো. সোলাইমান হোসেন সেলিম, যিনি গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘শহীদ হিসেবে মামলা দায়েরের মাধ্যমে চিহ্নিত হন, তিনি আসলে জীবিত।

তাকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন তাঁরই বড় ভাই গোলাম মোস্তফা ওরফে মস্তু ডাকাত। মামলা দায়েরের ৯ মাস পর বেরিয়ে আসে আসল সত্য।

২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় করা ওই মামলায় মোট ৪১ জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ৩ আগস্ট রাজধানীর কাজলা পেট্রল পাম্পের সামনে সেলিম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। অথচ তিনি এখনো বেঁচে আছেন এবং ফুলবাড়িয়ার বেলতলী বাজারে একটি মুদির দোকান চালান।

মামলার সাক্ষী হিসেবে সেলিমের আরও দুই ভাই হেলাল উদ্দিন ও আবুল হোসেনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, পারিবারিক জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এই নাটক সাজান মস্তু। যেহেতু সেলিমের কোনো পুত্রসন্তান নেই, তাই তাঁর সম্পত্তি কব্জা করতেই তাঁকে ‘মৃত দেখিয়ে মামলা করেন বড় ভাই।

সেলিম জানান, ‘মস্তু এলাকায় চিহ্নিত ডাকাত। সে বহু বছর ধরে বাড়ি আসেনি। আমার অংশের জমি জোর করে নিতে সে এই ষড়যন্ত্র করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বারবার থানায় গিয়েও নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে পারিনি। এটি অবিশ্বাস্য যে, একজন জীবিত মানুষকে হত্যার মামলা দিয়ে হয়রানি করা যায়।

সেলিমের স্ত্রী হাজেরা খাতুন বলেন, ‘তিন ভাইই সেলিমকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এর আগেও হামলা চালিয়েছিল, এখন সম্পত্তি দখলের জন্যই এই নাটক। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সেলিম একজন শান্তশিষ্ট ও পরিশ্রমী মানুষ। বাড়ির কলহ এড়াতে তিনি বাজারে জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেন।

ফুলবাড়িয়া থানার ওসি রুকনুজ্জামান বলেন, ‘মস্তু একজন স্বীকৃত অপরাধী। তাঁর বিরুদ্ধে খুনসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সেলিমকে “মৃত দেখিয়ে মামলা করাই প্রমাণ করে এটি একটি সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিবির উপপরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, ‘সেলিম জীবিত। আমরা আদালতের মাধ্যমে দুই ভাইয়ের ডিএনএ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত একজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। গোলাম মোস্তফা পলাতক, তার ফোন নম্বরও বন্ধ।

এই ঘটনাটি দেখিয়ে দেয়, পারিবারিক দ্বন্দ্ব কীভাবে বিকৃত রূপ নিয়ে আইনি ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে পারে। তদন্ত চলমান থাকলেও, এই মামলার পেছনের চক্রান্ত প্রকাশ্যে আসার পর দোষীদের শাস্তির দাবি জোরালো হচ্ছে।

Link copied!