অনেকে বলে থাকেন একটি পোষা প্রাণী পালন যেন জীবনকেই বদলে দেয় ৷ একাকীত্ব, বিমর্ষতা সব ভুলিয়ে আমাদের একান্ত সঙ্গী হয়ে ওঠে পোষা প্রাণীগুলো। কিন্তু সেই প্রাণীগুলোরও দরকার হয় সঠিক যত্নের। বিশেষ করে শহরের ফ্ল্যাট বাড়ি তথা আবদ্ধ জায়গায় বিড়াল, কুকুর বা অন্য প্রাণীদের পালার জন্য দরকার পরে কিছু বিশেষ যত্নের।
একটি কুকুর, বিড়াল বা খরগোশ এর মায়াবী আচরণে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই বাড়িতে পোষা প্রাণী আনতে চান। কিন্তু তাদের দৈনিক খাবারের ব্যবস্থা, যত্নআত্তি- সব মিলিয়ে যেই পরিমাণ শ্রম দিতে হয় তা নিয়ে পূর্ব ধারণা থাকে না অনেকেরই। তাই শখের প্রাণী বাড়িতে আনার পূর্বেই লালন- পালনের অভিজ্ঞতা আছে এমন কারোর সাথে আলোচনা করে সব জেনে নেওয়া ভালো।
ছোট প্রাণী যেমন বিড়াল, কুকুর আর খরগোশ পালতে হলে ঘরের জানালা ও বারান্দায় নেট লাগিয়ে নিতে হবে। নাহলে অনেক সময় পোষা প্রাণীরা উপর থেকে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘরে কোনো ধারালো বা খোঁচা খাওয়ার মতো কিছু থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক তার বা সংযোগ থাকলে তা মেরামত করে ফেলতে হবে। ধাক্কা লেগে পড়ে যেয়ে প্রাণীটি ব্যথা পেতে পারে এমন জিনিসগুলোও সরিয়ে রাখতে হবে৷
বাসা-বাড়িতে বিড়াল ও কুকুরের জন্য আলাদা ঘরের দরকার হয়না, তবে খরগোশ এর ক্ষেত্রে একে খাঁচা বা কাঠের ঘরে রাখা যেতে পারে। বিড়ালের জন্য বাড়িতে লুকিয়ে থাকার মতো কিছু স্থান রাখতে হবে।
বিবিসির ভেট রেবেকা এক সাক্ষাৎকারে জানান, খরগোশের খাঁচার উচ্চতা খরগোশের দেহের উচ্চতা (দুই পায়ে দাঁড়ানো অবস্থার) চেয়ে বেশি হওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি প্রাণীর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আলাদা ধরনের খাবার দরকার। যেমন, কুকুর ও বিড়াল আমিষভোজী প্রাণী। তাই এদের খাদ্যতালিকায় মূল খাবার হবে মাছ, মাংস এবং অল্প পরিমাণে ডিম। মাঝে মাঝে গাজর, পেঁপে, ব্রকলি, আলু, কুমড়ো ইত্যাদি সবজি এবং ভাত সামান্য দেয়া যেতে পারে ৷ তবে প্রতিদিন প্রোটিন জাতীয় খাবারের আধিক্য রাখতে হবে ৷
বিড়াল ও কুকুরেরা হজমের সুবিধার্থে মাঝে মাঝে খুব সামান্য ঘাস খায়। তাই সম্ভব হলে টবে ঘাস লাগানো যেতে পারে। তাইলে প্রয়োজনমতো প্রাণীরা খেয়ে নেবে।
খরগোশের ক্ষেত্রে শুকনো খড়, কচি ঘাস, ধনেপাতা, লেটুসপাতা, পালং শাক, টমেটো, শসা, গাজর, আলু, মূলা, ছোলা দিতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন খরগোশের খাদ্যতালিকায় কিছু পরিমাণ শুকনো খড় রাখা ওদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
কিছু কিছু খাবার আছে যা বিড়াল বা কুকুর খেলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এগুলো হলো- চকলেট, কফি, কিশমিশ, আঙুর, পেঁয়াজ, রসুন, অতিরিক্ত লবণ, লেবু ও সাইট্রাস জাতীয় ফল। এগুলো কোনোভাবেই তাদেরকে দেয়া যাবে না।
বিড়াল ও কুকুরদের সপ্তাহে একবার করে গোসল করানো ভালো। গোসলের সময় সাধারণ সাবান- শ্যাম্পু ব্যবহার না করে কুকুর বা বিড়ালদের জন্য তৈরি বিশেষ শ্যাম্পু ব্যবহার করা প্রয়োজনীয়।
বড় লোমের কারণে গরমকালে বিদেশী কুকুর ও বিড়ালগুলো কষ্ট পেলে তাদের লোম ছাটিয়ে নেওয়া যায়। তবে বিড়াল ও কুকুরের গোঁফ (হুইস্কারস) যেন কাটা না পড়ে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে ৷
পোষা প্রাণীদের নখ না কাটাই ভালো। তবে একান্তই কাটার প্রয়োজন হলে সামনের দিক থেকে অল্প পরিমাণে কাটতে হবে৷ বেশী কাটা হলে আঙুল থেকে রক্তপাত ঘটতে পারে।