ইসি কিংবা কোনও মন্ত্রী সনদ দিলেই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যাবে না: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩, ১২:৫৬ পিএম

ইসি কিংবা কোনও মন্ত্রী সনদ দিলেই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হয়ে যাবে না: সিইসি

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকারের কোনো মন্ত্রীর সার্টিফিকেটে নির্বাচন ক্রেডিবল (বিশ্বাসযোগ্য) হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে যেকোনো মূল্যে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে হবে। কোনো সরকারি মন্ত্রীর অধীনে ভোট ক্রেডিবল হবে না । ভোট ক্রেডিবল হবে গনমাধ্যম এবং সাধারণ ভোটারদের পর্যবেক্ষণ দিয়ে । রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম শ্রেনীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় একথা বলেন নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল । 

সিইসি বলেন, আজকের প্রশিক্ষণে যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন তারা একটা নির্ধারিত সময়ের জন্য ভোটকেন্দ্রে সাপোর্ট দিবেন। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র সংবিধানের এক নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে বাংলাদেশ একটা প্রজাতান্ত্রিক দেশ । জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে যে সরকার গঠিত হয় এটাই প্রজাতন্ত্র।

তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া কোনো প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার অবকাশ রাখে না । নির্বাচনের মাধ্যমে যারা সংসদ নির্বাচিত হবেন । সংসদ থেকে কিন্তু সরকারটা বেরিয়ে আসে । সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকে কিন্তু মূল সরকার নির্বাচিত হয় । নির্বাচন আমাদের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্ক চলছে । নির্বাচনের গ্ৰহনযোগ্যতা , নির্বাচন ঠিকঠাক হয়েছে কি হয়নি এই সমস্ত বিতর্কের কারণে বাকবিতন্ডতা এবং সহিংসতা হয়েছে । আগামী নির্বাচনে আমাদের একটু বেশি মনোযোগী হতে হবে । দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটু বাকবিতন্ডতা আছে এবং রাজনৈতিক অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে । সাধারণত নির্বাচন খুব উৎসব মুখর পরিবেশে হয় । ১৯৫৪ সালের নির্বাচন কিন্তু যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন ছিলো । সেখানে কোনো নির্বাচন কমিশন ছিলো না । পূর্ব পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই নির্বাচন টা করেছিলো। ৫৪ এই নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছিলো।এরপর থেকে কিন্তু সবগুলো নির্বাচন খুব উৎসব মুখর ভাবে সবগুলো দলের অংশগ্রহণ নিয়ে হয়েছিলো এটা নির্বাচনের একটা ইউনিভার্সাল ফ্রন্ট। এই নির্বাচনে এউনিভার্সাল একটু ক্ষুন্ন হয়েছে । সেখানে একটা বড় অংশ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে । ১৪ সালে নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছিলো নির্বাচন বর্জন করা হয়েছিলো। আবার ২০১৮ সালে নির্বাচনটা সার্বিকভাবে অংশগ্রহণ হলেও বিতর্কের কারণে প্রচলিত নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী সার্বিকভাবে গ্ৰহনযোগ্যতা পায়নি । এবারের নির্বাচন যেকোনো মূল্যে অবাধ সুষ্ঠু করতে হবে । একটি সরকার দায়িত্বে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে, সরকার বাধ্য নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করার জন্য। আবার সরকারের সহায়তা ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচন করতে পারি না । আমাদের প্রায় ১৬ লাখ লোক নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত হবেন । এর মধ্যে আট লক্ষ পোলিং এজেন্ট যারা সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন এবং আট লক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনের মাঠে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। 

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় অনুকূল পরিবেশ বহাল রাখতে এবং ভোটারগন যেন নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার ক্রয় করতে পারেন সেই পরিবেশ ঠিক রাখবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে সরকারের সাথে আমাদের সাথে ,তারা তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় । তারা যেহেতু আগ্ৰহ প্রকাশ করছেন,তারা বেশ শক্ত ভাবেই আশা করেন । আমরা যেহেতু গ্লোবাল কমিউনিটিতে বসবাস করি আমরা ওই কমিউনিটির সদস্য। আমরা ইউনিভার্সাল ডেক্লেরেশন অব হিউম্যান রাইটস স্বাক্ষর করেছি। যেহেতু আমরা স্বাক্ষর করেছি আমাদের কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল অবলিগেশন আছে , নির্বাচন কোর্সে। 

 কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা সবসময় বলে থাকি আমরা নির্বাচন কে বিশ্বাস করাতে পারবো না আমার সার্টিফিকেট দিয়ে কিংবা আমাদের সরকারী কোনো মন্ত্রীর দ্বারা নির্বাচন ক্রেডিবল হবে না ।ক্রেডীবল হবে দৃশ্যমানতার মুখ্য দিয়ে জনগন এবং গনমাধ্যম কর্মী দিয়ে । গনমাধ্যম কর্মীদের অর্থরাইজড করা হবে তারা স্বাধীনভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে অবাধ বিচরণ করতে পারবে । তারা গোপন কক্ষ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গা গিয়ে ছবি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রচার করতে পারবেন। জনগন যদি ভোট দিয়ে বাইরে এসে বলে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে গনমাধ্যম যদি প্রচার করে ভোট সুষ্ঠু হয়েছে তাহলেই নির্বাচন ক্রেডিবল বলে গন্য হবে। এই ক্রেডিবল শব্দ কিন্তু আইসিপি আর এ ব্যবহার করা। জনগন যেন বিশ্বাস করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে অবাধ নিরপেক্ষ ভাবে হয়েছে । ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতা আছে । ভোটাররা ভোটকেন্দ্রের প্রকৃত সত্য তুলে ধরবেন। কিন্তু কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আছে যেখানে অপপ্রচার হতে পারে এটাকে ডিজইনফরমেশন বলে । ডিজইনফরমেশন কে সবসময় আমরা লাইট করি কিন্তু এই এইটা একটু সুপ্রিম করতে হবে । আমি যখন ইউটিউব,সোশ্যাল মিডিয়া দেখতাম এগুলো ওহির মতো বিশ্বাস করতাম। পরে দেখলাম এ ধরণের তথ্য নব্বই শতাংশ বানোয়াট। 
আমি শেষে এটাই বলবো বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র, প্রজাতন্ত্রের অধীনে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া জরুরী। এইখানে সবার সার্বিক সহযোগিতা আমি কামনা করি । 

প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে সিইসি বলেন, আন্তর্জাতিক যে প্রেক্ষাপট ডায়মেনশন এটাকে মাথায় রাখতে হবে। আমাদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে, আমাদের সামাজিক স্বার্থে। এটিকে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নির্বাচনে আপনাদের দৃষ্টিতে কোনো রকম যদি অনাচার ধরা পড়ে এবং সেখানে যদি আপনাদের এখতিয়ার থাকে প্রতিহত করার তাহলে অবশ্যই আপনার বৈধ ক্ষমতা দিয়ে সেটি প্রতিবিধান অতি অবশ্যই করবেন। আমি বিশ্বাস করি সকলের মিলিত প্রয়াসে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এবং দেশে ও বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হবে। জনগণের কাছে নির্বাচনটা বিশ্বাসযোগ্য হবে। 

কর্মশালায় ইসি মো. আনিছুর রহমান বলেন, শুধু আমাদের দৃষ্টিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করলে হবে না। আমাদের দিকে সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এই নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য না করতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। বাংলাদেশ সকল বিষয় বিশেষ করে আর্থিক, সামাজিক, ব্যবসা-বানিজ্যসহ সবকিছু থমকে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। বাংলাদেশ হয়তোবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীসহ ইসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!