মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন

বিশ্বনেতাদের কাছে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ১২:৪০ এএম

বিশ্বনেতাদের কাছে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি: বাসস থেকে নেয়া

জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে অস্ত্র ও যুদ্ধের পেছনে অর্থ খরচ না করে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জার্মানির মিউনিখ শহরে ‘ফ্রম পকেট টু প্ল্যানেট: স্কেলিং আপ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স" শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে আবেগঘন বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মনে রাখা উচিত, যখন মানবতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে, সংকীর্ণ স্বার্থ অনুসরণ করে কিছুই হবে না। সংবেদনহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং তার পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয় দরকার।

ছয় দফা প্রস্তাবের প্রথম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো যে অঙ্গীকার করেছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে অবশ্যই ২০২৫-পরবর্তী নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যমাত্রার ব্যাপারে একমত হতে হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, বিশ্বকে যুদ্ধ ও সংঘাত, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড থেকে সরে আসতে হবে যেমনটা আমরা গাজা ও অন্যত্র দেখছি।

প্রধানমন্ত্রী তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট দুর্যোগ প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য যে অর্থায়ন করা হয় তাতে প্রচণ্ড ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। অভিযোজন অর্থায়নের বর্তমান হারকে অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি অভিযোজনে সহায়তার জন্য বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউরো (১০৭ কোটি ডলারের সমান) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ধন্যবাদ জানান।

চতুর্থ প্রস্তাবটিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল পাওয়ার পথ সুগম করার দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান করতে হবে। এ সময় তিনি জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য আমাদের মাত্র দুটি যোগ্য প্রতিষ্ঠান আছে, আরও দুটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তার পঞ্চম পরামর্শে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক অর্থায়নের ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ঋণের বোঝা দূর করতে তাদের জন্য অনুদান ও সুবিধাজনক ঋণ লাভের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থপূর্ণ ফলাফল দেখাতে হবে।

সবশেষ পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু কর্মসূচি জন্য বেসরকারি পুঁজি প্রবাহের জন্য সরকারগুলোকে সঠিক পরিকল্পনা, নীতি ও ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রকল্পগুলির জন্য বেসরকারি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্ভাবনী, মিশ্র অর্থায়নের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

এটি সুস্পষ্ট যে, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া জলবায়ু অর্থায়নের বিপুল পরিমাণ ঘাটতির কার্যকর সমাধান করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সকলেই জলবায়ু প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে বিনিয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের বর্তমান মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।

প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন এখনও গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়ন‍‍’ এবং এর অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত সংজ্ঞার অনুপস্থিতির কারণে এটি আরও জটিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে কপ-১৫ চলাকালে শেষ মুহূর্তের সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা বেশ কঠিন হবে। দেশে ফিরে যাওয়ার পর, তিনি স্থানীয়ভাবে অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এখন স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু অভিযোজনের একটি পরীক্ষাগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে প্রায় ৮০০ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সবগুলোই নিজস্ব সম্পদ থেকে। তবে, আমাদের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছর যে ৭-৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন তার তুলনায় এটি এখনও অপর্যাপ্ত।

তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলোকে পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় রাখার জন্য, জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) অনুসারে প্রভাব প্রশমনের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন প্রয়োজন বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অভিযোজনের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২১৫-৩৮৭ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এটা সুস্পষ্ট যে, অর্থায়নের বিপুল ব্যবধান বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

শুক্রবার শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্স। চলবে রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। এর আগে সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মিউনিখ পৌঁছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।  

Link copied!