বিএসএমএমইউ উপাচার্য

“খালাত-ফুফাত ভাইবোনের সঙ্গে বিয়ে উইলসন্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায়”

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১৪, ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম

“খালাত-ফুফাত ভাইবোনের সঙ্গে বিয়ে উইলসন্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায়”

উইলসন্স রোগের জিন বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ। ছবি: সংগৃহীত

নিকটাত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে উইলসন্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ঝুঁকি কমাতে খালাত-ফুফাত ভাইবোনের মধ্যে যেন বিয়ে না হয়, সেদিকে সচেতন হতে হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক।

“৩ ক্ষেত্রে জিনের রূপান্তর দেখা গেছে। এর মধ্যে দুই রূপান্তর এই প্রথম শনাক্ত হলো। আর একটি রূপান্তর আগেই বিশ্বের অন্য কোথাও শনাক্ত হয়েছিল”
- লায়লা আনজুমান বানু
অধ্যাপক, জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। এতে উইলসন্স রোগ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, “এটি নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তনের ফলে ঘটে যা একটি প্রোটিন তৈরির মধ্য দিয়ে শরীর থেকে অতিরিক্ত তামা সরানোর ফলে শরীরে বিশেষত মস্তিস্ক, যকৃত ও চোখে তামা জমা হয়। অতিরিক্ত তামার মাধ্যমে সৃষ্ট ক্ষতিই উইলসন্স ডিজিজের উপসর্গগুলো তৈরি করে।”

তিনি আরও বলেন, “পরিবারের একজনের মধ্যে যদি রোগটি শনাক্ত করা যায়, তখন অন্যান্য সদস্যদেরও পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তের মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব। এই রোগঅবশ্যই মা-বাবা থেকে আসতে হবে। শুধু একজন থেকে এলেই হবে না, মায়ের থেকেও আসতে হবে এমনকি বাবার থেকেও আসতে হবে। দুই জিন একত্র হলেই সন্তানের উইলসন্স ডিজিজ হয়। এ জন্য আমাদেরকে (ছেলেদের) অবশ্যই খালাত, মামাত ও ফুফাত বোনের সঙ্গে বিয়ে বন্ধ করতে হবে। তবেই এই রোগে আক্রান্ত কমে আসবে।”

পাশাপাশি ‘জেনেটিক মিউটেশন অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল ম্যানিফেস্টেশন অব বাংলাদেশি উইলসন্স ডিজিজ পেশেন্টস’ শীর্ষক এই সেমিনারে উইলসন্স রোগের সম্পূর্ণ নতুন জিনগত পরিবর্তন শনাক্তে গবেষকদের সমর্থ হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। গবেষকরা বলছেন, নতুন জিনগত যে পরিবর্তন শনাক্ত হয়েছে, সেটা বিশ্বে কোথাও দেখা যায়নি।

বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন উইলসন্স আক্রান্ত রোগীর জিন বিশ্লেষণ করে এই রোগের সম্পূর্ণ নতুন জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত হয়েছে বলেও সেমিনারে উল্লেখ করা হয়। গবেষকদের ভাষ্য, এর ফলাফল দেশের উইলসন্স রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিএসএমএমইউয়ের নিউরোলজি ও জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের গবেষক ও চিকিৎসকরা উইলসন্স রোগের জিন বিশ্লেষণের জন্য এই গবেষণা করেন।

“২৫ জনকে এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল; ২১ জনের হাত-পা শক্ত হওয়া, ২৮ জনের হাত-পা কাঁপা ও ১৪ জনের অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানোর সমস্যা ছিল। ১১ জনের ছিল অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা”
- আহসান হাবিব হেলাল
অধ্যাপক, স্নায়ুরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)

সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, উইলসন্স রোগের কারণ ত্রুটিযুক্ত জিন। সন্তান এই ত্রুটিযুক্ত জিন পায় মা-বাবার কাছ থেকে। ত্রুটিযুক্ত জিনের কারণে মানুষের মস্তিষ্ক, যকৃত, চোখসহ বেশ কিছু অঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত তামা জমা হয়। উইলসন্স রোগে আক্রান্তের হাঁটাচলা কিছুটা ভারসাম্যহীন, হাত কাঁপে, কথা বলতে অসুবিধা হয়, ঢোক গিলতে সমস্যা হয়, আচরণগত কিছু জড়তা থাকে। প্রতি ৩০ হাজারের মধ্যে মাত্র ১ জন উইলসন্স রোগী দেখতে পাওয়া যায়। এটি বিরল একটি রোগ।

যাদের নিয়ে গবেষণা
বিএসএমএমইউয়ে এখন পর্যন্ত ২০০ উইলসন্স রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা নেওয়া ৫০ রোগীর ওপর এই গবেষণা হয়েছে।

রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউয়ের স্নায়ুরোগ বিভাগের অধ্যাপক আহসান হাবিব হেলাল। তিনি বলেন, “২৫ জনকে এই রোগের কারণে স্কুল ছাড়তে হয়েছিল; ২১ জনের হাত-পা শক্ত হওয়া, ২৮ জনের হাত-পা কাঁপা ও ১৪ জনের অনিয়ন্ত্রিত ঘাড় মোচড়ানোর সমস্যা ছিল। ১১ জনের ছিল অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা মোচড়ানোর সমস্যা।”

“বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়। জিনগত পরিবর্তন শনাক্ত করা তারই উদাহরণ। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে উইলসন্স রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ঝুঁকি কমাতে খালাত-ফুফাত ভাইবোনের মধ্যে যেন বিয়ে না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে”
- অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক
উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)

৫০ জন রোগী ত্রুটিযুক্ত জিনের কারণেই উইলসন্স রোগে ভুগছেন। তাদের রক্তের নমুনা থেকে প্রথমে ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়, তারপর উইলসন্স রোগের জন্য দায়ী নির্দিষ্ট জিন (এটিপি৭বি) বিশ্লেষণ করা হয়। এসব রোগীর জিন বিশ্লেষণের ফলাফল উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আনজুমান বানু। তিনি বলেন, “৩ ক্ষেত্রে জিনের রূপান্তর দেখা গেছে। এর মধ্যে দুই রূপান্তর এই প্রথম শনাক্ত হলো। আর একটি রূপান্তর আগেই বিশ্বের অন্য কোথাও শনাক্ত হয়েছিল।”

Link copied!