অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৩, ২০২২, ০৩:২১ পিএম

অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ

বহুমাত্রিক লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে। ঢাকার ৪র্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আল-মামুনের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৮ বছর পর আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

এর আগে, গত ২৭ মার্চ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মামুন রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর অমর একুশে বই মেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় মারাত্মক আহত হন প্রথিতযশা লেখক হুমায়ুন আজাদ। হামলার পরদিন তার ভাই মঞ্জুর কবির বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুতে এই মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়।

২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশের (সিআইডি) পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার পরিবর্তে হত্যার অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরা হলেন- নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ‘র (জেএমবি) সূরা সদস্য আনোয়ারুল আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শাওন, রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা যে তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেয় তার মধ্যে সালাহউদ্দিন ওরফে সালেহীন এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফিজ মাহামুদ এ মামলার আসামি। এদের মধ্যে রাকিব ওইদিন রাতে ধরা পড়ে এবং পরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়। মিজানুর রহমান এবং আনোয়ারুল আলম কারাগারে আছেন। নুর মোহাম্মদ এবং সালেহীন পলাতক রয়েছেন।

কি লিখতেন হুমায়ুন আজাদ?

বহুমাত্রিক, প্রথাবিরোধী লেখক, গল্পকার, গবেষক, ঔপন্যাসিক ও কবি-সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রে অবাধ বিচরণ করা হুমায়ুন আজাদ ছিলেন উগ্র মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর চক্ষুশূল। সাহিত্যের প্রতিটি শাখায়  গতানুগতিক চিন্তাকে তিনি সচেতনভাবেই পরিহার করেছেন। তিনি যা ভাবতেন তাই সাহসের সঙ্গে লিখতেন বলে অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছেন।

হুমায়ুন আজাদ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি কখনও সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করে লিখেছেন এমন প্রমাণ আজ অবধি পাওয়া যায়নি।  তবে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করতেন এবং এটি বিভিন্ন ভাবে তার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সমাজে চলা রক্ষণশীলতা এবং প্রথার বিরোধিতা করতেন।

কেন মৌলবাদীদের হুমকিতে ছিলেন?

হুমায়ুন আজাদ ছিলেন সত্যান্বেষী বুদ্ধিজীবী। নির্ভয়ে মত প্রকাশ করে সরকার কিংবা ক্ষমতাশালী, উগ্রবাদীদের চক্ষুশূল হতে কখনও পিছপা হননি। শাসক, সমাজের মোড়ল ও ধর্মান্ধদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্যি কথাটি বলে গেছেন আমৃত্যু।  আর সত্যি উচ্চারণ করে শাসক ও মৌলবাদী এ দুইয়ের রোষানলে পড়েছিলেন বহুমাত্রিক ও ক্ষণজন্মা লেখক হুমায়ুন আজাদ। 

হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ ও ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’ প্রকিাশিত হলে দেশে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ২০০৪ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামকে পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন। এই উপন্যাসটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র রূপক-ঋণাত্মক ভাবে বাংলাদেশের একটি কাল্পনিক মৌলবাদী সংগঠনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন।ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের ওই দলের নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়।

২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জাতীয় সংসদে পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটিকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করেন। এ ধরণের লেখা বন্ধ করতে  ব্ল্যাসফেমি আইন প্রণয়নে ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

যেভাবে মৃত্যু এই ভার্সেটাইল লেখকের

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পাওয়া এই লেখককে চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত করে সেই চিহ্নিত মৌলবাদীরা। হামলার পরের দিন তাঁর ভাই মঞ্জুর কবির হত্যা প্রচেষ্টা মামলা করেন। হুমায়ুন আজাদ আহত হয়ে ২২ দিন ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ওই বছরেই জার্মানি যান হুমায়ুন আজাদ।  ওই বছরের ১২ আগস্ট মিউনিখে রহস্যজনকভাবে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে দেশটির পুলিশ।

Link copied!