ইভিএম: তরুণদের স্বাচ্ছন্দ, প্রবীণদের বিড়ম্বনা!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৫, ২০২২, ১১:৩৪ পিএম

ইভিএম: তরুণদের স্বাচ্ছন্দ, প্রবীণদের বিড়ম্বনা!

‘জীবনে ৩০-৪০ টার মত নির্বাচনে ভোট দিছি এমন আজগুবি ভোট কখনও দেইনি। ৩ ঘন্টা দাঁড়ায় থাইক্যা গিয়া দেখি কাগজপত্র কিছু নাই। কি সব টেপাটেপি।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)  ভোট দিতে এসে এমন প্রতিক্রিয়া জানান প্রবীণ ভোটার আব্দুল হাকিম। তাঁর মতো এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেকের।

ব্যালট পেপারে সিল মারতে মারতে অভ্যস্ত এসব প্রবীণ ভোটার ইভিএমে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে এখনও যে আনাড়ি রয়ে গেছেন তা অপকটে স্বীকার করছেন। তাদের তুলনায় ইভিএমে ভোট দিতে এসে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন তরুণ প্রজন্মের ভোটাররা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এই পদ্ধতিতে ভোট দিতে তরুণরা বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করলেও প্রবীণদের পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। যার কারণে অনেক কেন্দ্রে ভোট প্রদানের সময় দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

কুসিক নির্বাচনে বুধবার ভোট চলাকালে বেলা ৩টার দিকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে গিয়ে  এমন চিত্র দেখা যায়। তরুণ ও প্রবীণ ভোটারদের সঙ্গে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের মতবিনিম়য়কালে উঠে আসে ইভিএম নিয়ে নানা কথা।

নজীব মিয়া। নগরপিতা বাছাই করতে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছেন প্রায় ষাট বছর বয়সী এই ভোটার।  দ্য রিপোর্ট লাইভকে তিনি বলেন, “ইভিএম নতুন সিস্টেম। এই সিস্টেমে আগে কখনো ভোট দেইনি। আগে তো টিপসই দিয়ে ভোট দিছি। এইবার মেশিনে দেওয়া লাগছে। বুইঝা নিছিলাম কিন্তু ভেতরে গিয়ে আওলাই গেছি। তাই সময় লাইগছে।”

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আরাফাত নামে ২৩ বছরের এক তরুণ ভোটারের। জীবনে প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন তিনি। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “আগে ভোট দেইনি কিন্তু শুনেছি। আগে হাতের টিপসই দিয়ে ভোট দিতে হতো। কিন্তু  এখন মেশিন আসাতে আমার কাছে ব্যাপারটা খুব সহজ মনে হয়েছে। ইভিএমে তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে বাড়ি যেতে পারছি।”

তবে নগরীর বজরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় একদমই ভিন্ন চিত্র। ভোটারদের দীর্ঘ সারি।  ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী ভোটাররা জানান তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তাদের অনেকেই একসাথে বলেন, “নতুন এই পদ্ধতি বুঝে উঠতে না পারায়, ভেতরে দীর্ঘ সময় লাগছে। আর তাই বাহিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাকিদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।”

একই কেন্দ্রে সামিয়া নামে এক তরুণী বলেন, “বাইরের পরিবেশ কিছুটা ঘোলাটে হলেও ভেতরে খুব একটা সময় লাগেনি। ইভিএম পদ্ধতিটা খুব সহজ এবং দ্রুততর।”

একই ধরণের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন বাতাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট দিতে আসা তরুণ প্রজন্মের ভোটার নাজিয়া খাতুন। তিনি বলেন, “এই প্রথম ইভিএমে ভোট দিয়েছি। তাই শুরুতে বুঝতে পারছিলাম না। আনুমানিক ৪ থেকে ৫ মিনিট সময় লেগেছে।”

তবে রহমত উল্লাহ নামে এক মাঝবয়সী ভোটার বলেন, “এর আগে কখনো ইভিএমে ভোট দেইনি। যার ফলে কিছুটা হলেও ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সময় লেগেছে অনেকটা বেশি। বাহির থেকে জেনে গেলেও ভেতরে গিয়ে বুঝতে পারছিলাম না।”

এত কষ্টের পরও ভোটকেন্দ্রে এসে নিজের অভিব্যক্তি ও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে। তিনি বলেন, “একটা ভোটের অনেক মূল্য। আমরা এই কুমিল্লার উন্নয়ন চাই। রাস্তাঘাটের যানজট, কালভার্ট সবকিছু ভালো চাই। তাই ভোট নষ্ট না করে চলে এসেছি ভোট দিতে। কারণ  আমার ভোটের মাধ্যমে হয়তো আমার পরের প্রজন্ম ভালো কিছু দেখতে পাবে, ভালো ফলাফল পাবে।”

অনেক ভোটার না বুঝতে পারায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ একটু ধীরগতিতে হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাতাবাড়িয়া বালিকা বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার রকিবুল ইসলাম। তিনি দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “মোট ভোটার রয়েছে ১ হাজার ৯১৭ জন। কিন্ত ভোট খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। অনেকেই বুঝতে পারছেনা ইভিএম পদ্ধতি ফলে সময় লাগছে।”

অন্য একটি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মনিরুজ্জামান দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট দিয়েছে ৬৯৯ জন কিন্তু ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭ জন।”

বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “অনেকেই ইভিএম বুঝতে পারছে না। এদিকে বেশি সময় নেওয়ার কারণে মেশিন হ্যাং করছে। আবার আমাদের বুথের ভেতরে যাওয়ার এখতিয়ার নেই। ফলে অনেকে না বুঝেই এবং ভোট না দিয়েই চলে আসছেন। ফলে তাদেরকে আবার পাঠাতে হচ্ছে। এর ফলে ভোটগ্রহণ কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। “

ইভিএম প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহনের বিষয়টি নিয়ে আরও প্রচার ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন মনিরুজ্জামান।

তিনি বলেন, “ইভিএমে ভোটের বিষয়ে যেভাবে প্রচার হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। সে কারণে ভোটাররা ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এজন্য ভোট দিতে সময় লাগছে।”

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৭টি ওয়ার্ডে ১৪২ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন লড়েছেন।

এর আগে, বুধবার সকাল ৮টায় দেশের আলোচিত এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট নেওয়া শুরু হয়।  নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩ হাজার ৬০০ জন সদস্য, ১০৫টি মোবাইল টিম, র‍্যাবের ৪০টি টিমসহ বিভিন্ন সংস্থা।

Link copied!