ঈদে রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা কেন কমছে?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০৫:৩০ এএম

ঈদে রাজধানী থেকে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা কেন কমছে?

পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ উদযাপন করতে প্রতিবারই রাজধানী ছেড়ে ঘরমুখী হয় মানুষ। তবে এবারের ঈদে সেই চিত্রটা কিছুটা কম দেখা গেছে। ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা যেখানে কম তার বিপরীতে ঈদের পর বাড়ি থেকে রাজধানীতে না ফেরা মানুষের সংখ্যাও বেশি।

রোজার ঈদে পরিবার-পরিজনের কাছে যাওয়া মানুষের সাথে ১ কোটি ২৩ লাখ সিম ঢাকা ছেড়েছিল, তবে ছুটি শেষে ফিরেছে ৪১ লাখ। ফলে ৮২ লাখের মতো সিমধারী এখনও রয়েছেন রাজধানীর বাইরে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার ফেইসবুকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এরমধ্য দিয়ে এবারের ঈদে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যার একটি ধারণা পাওয়া যায়।  যদিও ১ কোটি ২৩ লাখ সিম ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে সমান সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। কারণ একজন ব্যক্তির একাধিক মোবাইল সিম যেমন রয়েছে, তেমনি আবার অপ্রাপ্তবয়স্করা সিমের মালিক হয় না, যদিও ঢাকা ছাড়ার মিছিলে তারাও ছিল।

কমেছে বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা

এবার রোজার ঈদের আগের তিনদিন সাড়ে ৫৩ লাখের বেশি মোবাইল সিম ঢাকা ছেড়ে দেশের নানা প্রান্তে গেছে। কিন্তু যদি ২০২২ সালের রোজার ঈদের সংখ্যাটা দেখেন সেখানে চিত্র ভিন্ন। সেবছর আগের তিনদিনে ঢাকা ছাড়ে প্রায় ৭২ লাখ ৫ হাজার সিম। আর ২০২১ সালে গিয়েছিল প্রায় ৬৬ লাখ সিম। এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এবার রাজধানী ছেড়ে যাওয়া লেঅক সংখ্যা গত দুই বারের থেকে কমে গেছে।  

সব অফিস আদালত বন্ধ থাকার পাশাপাশি, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। সেই সাথে মোটর সাইকেল হাইওয়েতে চলারও অনুমোদন মিলেছে। এমনকি পদ্মা সেতুতেও পারাপার হতে দেয়া হয়। এত সুবিধা থাকার পরও ঈদে ঘরমুখী মানুষ কম থাকার বিষয়টি অর্থনৈতিক বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয় এটা বাস্তব। তেমনি বর্তমানে খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে অধিকাংশ পরিবার। যে কারণে রাজধানীতে থাকা অনেক প্রান্তিক লোকই খরচ বাঁচাতে এবার ঈদে গ্রামে যায়নি।

এদিকে মাসের শেষে ঈদ হবার কারণে অনেকেই রাজধানী ছেড়ে স্থানান্তর হচ্ছে। যে কারণে আগামী মাস অর্থাৎ মে মাসের প্রথম দিকের অপেক্ষায় ছিল তারা। এসময়ে ঈদ হলে বেতনের টাকা নিয়ে বাড়ি যেতে পারতেন অনেকে। এতে ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ছেড়ে যাওয়াদের সংখ্যাও বেড়ে যেত।

সানেমের এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে,  চলতি বছরে দেশের ৩৯.৩ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ অতিরিক্ত কাজ করছে। ১৩.১ শতাংশ মূল কাজের পাশাপাশি নতুন আরেকটি কাজে যোগ দিচ্ছে। এছাড়া প্রায় ১০ শতাংশের মত লোক জমি, স্থাবর জিনিস বিক্রি ও পড়াশুনার খরচ কমিয়ে এনেছে।

প্রভাব বেশি পড়েছে নগরবাসীর

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি-এটা স্বাভাবিক। তবে গ্রামে কিন্তু আগের তুলনায় কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে ব্যবসার সুযোগ বেড়েছে। যে কারণে খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানও স্থানান্তর করতে গ্রামমুখী হচ্ছেন অনেকে।

খাদ্যাভাস পরিবর্তনে গ্রামের চেয়ে শহরের বাসিন্দারা বেশি ভুক্তভোগী। গ্রামের ৮৬ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ খাদ্যে পরিবর্তন আনলেও শহরের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এনেছে ৯৪.৪ শতাংশ মানুষ। এদিকে অন্য সব সূচকে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষ ‘নেতিবাচক’ অবস্থানে রয়েছে।

যার ফলে ঈদে বাড়ি গেলেও অনেকেই হয়ত তাদের পরিবার পরিজনকে গ্রামে রেখে আসতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

Link copied!