কেন ফিরে এলো আগের সেই লোডশেডিং

মোহনা হোসেন

জুলাই ১৯, ২০২২, ০১:৩৩ এএম

কেন ফিরে এলো আগের সেই লোডশেডিং

বেশ কয়েক বছর পর আবারও অনেকটা হঠাৎ করেই লোডশেডিং ফিরে এসেছে। বিদ্যুৎ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে। অতীতে লোডশেডিং নিত্যদিনের ঘটনা হলেও বেশ কয়েকবছর বিদ্যুতের যোগান ভাল হওয়ায় শতভাগ বিদ্যুতের ঘরে নাম লেখায় বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎউৎপাদন কেন্দ্র করেও কোনো সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কুইক রেন্টাল বা ভাড়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে অসুবিধাতো রয়েছেই।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন বিদ্যুৎ চাহিদা ১৩ হাজার ৬১৫ মেগা ওয়াট। কিন্তু চলতি মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১২ হাজার ১১৫ মেগা ওয়াট। আর মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১১ হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হচ্ছে।

যেকারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে

বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ মূল কাঁচামাল গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে। দেশে যত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তার ৫২ ভাগ আসে গ্যাস থেকে।

চলতি বছরে জুনের ২৯ তারিখে বাংলাদেশে এলএনজি ৮৫৪ এমএমসিএফডি সরবারহ হলেও বর্তমানে তা সরবারহ হচ্ছে ৫০৭ এমএমসিএফডি।

এদিকে প্রাকৃতিক গ্যাস ৩ হাজার ১ শ এমএমসিএফডি থেকে কমে ২ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি সরবারহ হচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্যাসের সরবারহ কমে গিয়েছে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) এক ইউনিটের দাম যেখানে মাত্র ২৬ ডলার ছিল তা বেড়ে এখন ৩৬ থেকে ৩৮ ডলার হয়েছে। যার ফলে এই মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ রেখেছে সরকার।

কেন এলএনজি কেনা যাচ্ছে না?

বিশ্বে এলএনজি দুইভাবে কিনতে পারা যায়। প্রথমত স্পট মার্কেট মানে খুচরা মার্কেট। মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা যায়। কিন্তু এখানে প্রতিদিনই গ্যাসের দাম ওঠানামা করে। তবে বর্তমানে গ্যাসের দাম প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের ইউনিট মাত্র ২ ডলার মূল্যে কেনা হয়। সেখানে স্পট মার্কেটে গ্যাসের দাম ৩৮ ডলার। মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে রাশিয়ান গ্যাস সরবারহ কম করায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া আছে চুক্তিভিত্তিক এলএনজি। বিভিন্ন দেশের সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি অনুসারে এলএনজি গ্যাস কেনা হয়। যেখানে স্পট মার্কেটের তুলনায় কম দামে গ্যাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশে শুধুমাত্র কাতার ও ওমানের সাথে এমন চুক্তি আছে। যেখানে প্রতি ইউনিট ১১ ডলারে কেনা হয়। কিন্তু এখানে চুক্তির বাইরে বেশি গ্যাস কেনা সম্ভব হচ্ছে না।  

গ্যাস ছাড়া যেভাবে বিদুৎ উৎপাদন

গ্যাস ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন করার একটি মাধ্যম হচ্ছে  ডিজেল। তবে ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট ৩৫ টাকা খরচ পড়ে। তবে আমাদের দেশে ইউনিট প্রতি খরচ হচ্ছে ৫৫ টাকা। মূলত কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারনেই এটা হচ্ছে।

দ্বিতীয় উপায় কয়লা। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পায়রা ও রামপাল কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু পায়রা এখন পুরো উৎপাদনে যেতে পারছে না। এদিকে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুরুই হয়নি। দিনাজপুরে বড় পুকরিয়ায় কেন্দ্রে কয়লার ঘাটতির কারনে বিদ্যুৎ পুরোপুরি উৎপাদন হচ্ছে না। যদিও সেপ্টেম্বর মাসে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। তবে চাইলেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যায় না।

সম্প্রতি দেশে  প্রায় ১০ টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা থেকে সরে এসেছে সরকার। যেখানে ৮ হাজার ৪৫১ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে পারতো। তবে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার কারনে এ ধরনের কেন্দ্র স্থাপন করা থেকে বাংলাদেশ সরে আসছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরেকটি বড় উৎস হচ্ছে সমুদ্র। বাংলাদেশের সমুদ্রে ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট জমাট বাধা গ্যাস রয়েছে। যেখানে মিথেন গ্যাস রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় আমরা এখনও যেতে পারিনি। সব মিলিয়ে কি পরিমান লাভ হবে সেটি নিয়েও কোন তথ্য নেই। যার ফলে এই মুহুর্তে এই মাধ্যমে থেকে গ্যাস উত্তোলন সম্ভব নয়।

Link copied!