ঢাবিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য, এক যুগ ধরে পদ বঞ্চিত শিক্ষক

আফছার মুন্না

জুন ১৭, ২০২১, ১২:১২ এএম

ঢাবিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য, এক যুগ ধরে পদ বঞ্চিত শিক্ষক

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অমান্য করে প্রায় এক যুগ ধরে পদ, সম্মান ও পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিভাগের এক শিক্ষক। ১৯৯৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক সভায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে এর বিরুদ্ধে রিট করেন তিনি।

জানা যায়, ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরীর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে আদেশ দেন তাকে স্বপদে পুনর্বহালের জন্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আদেশের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। কিন্তু সেখানেও এই শিক্ষককে স্বপদে বহালের আদেশ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০০০ সালে হাইকোর্ট এই শিক্ষককে তার প্রাপ্য পদ মর্যাদা, পদোন্নতি ও বেতন দিয়ে পুনর্বহাল করার আদেশ দেয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে আপিল বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আদেশকে ‍‍`অবৈধ‍‍` এবং ‍‍`কর্তৃপক্ষের আইনি এখতিয়ার নেই‍‍` বলে বর্ণনা করে।

কিন্তু ১২ বছর পার হয়ে গেলেও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সেই আদেশ গ্রাহ্য করেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিমকোর্টের সেই আদেশ বাস্তবায়নের বদলে প্রায় ১৪ মাস পর তারা আবারও আপিল বিভাগে এর বিরুদ্ধে আবেদন করেন। নিয়ম অনুসারে বিচারকার্য শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে আবারও আবেদন করতে হয়। কিন্তু এই নিয়ম মানেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত হওয়া অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের আরেক শিক্ষক ড. অনুপ কুমার শাহাকে পুননিয়োগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অদৃশ্য কোন প্রভাবে এখনো নিয়োগ পাননি মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী।

মো. জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‍‍`আমি অনার্স এবং মাস্টার্স পর্বে প্রথম স্থান অধিকার করে পাস করি। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলার হয়, যেখানে আমি আবেদন করি। কিন্তু ‍‍`কোঅর্ডিনেশন এবং ডেভেলপমেন্ট‍‍` (সিঅ্যান্ডডি) কমিটির সভায় বিভাগের একজন শিক্ষক অভিযোগ তুলে বলেন, আমি পরীক্ষায় নকল করেছি। কিন্তু কমিটি বিষয়টি তখন আমলে নেয়নি।‍‍`

তিনি বলেন, ‍‍`এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটির বৈঠকে আরও একবার একজন শিক্ষক এই অভিযোগ করেন। এরপরও কমিটি বিষয়টি আমলে না নিয়ে সিন্ডিকেটের অনুমোদনের জন্য আমার আবেদন প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে সেখানেও অভিযোগ গেলে সিন্ডিকেট একটি তদন্ত কমিটি করে। সেই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল না করায়, আবারো একটি কমিটি করা হয়। সবশেষে সিন্ডিকেট ও নিয়োগ কমিটির অনুমোদনে প্রভাষক হিসেবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেই।‍‍`

‍‍`গত ২২ বছর ধরে আমার চাকরি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পরও আমাকে পুনর্বহাল করা হয়নি। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিন্ডিকেট সদস্যদের এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কাছে মানবিক আবেদন জানিয়েছি চাকরি ফেরত পেতে।‍‍`- কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জালাল।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির একজন কার্যনির্বাহী সদস্য বলেন, ‍‍`তার আবেদন নিয়ে শিক্ষক সমিতি কিছু করেনি। কেননা তিনি বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন এবং বিষয়টি বেশ পুরাতন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, তাকে পুনর্বহাল করা উচিত। কেননা আদালত তার কোন দোষ খুঁজে পায়নি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করতে পারে না। সে যেন ন্যায় বিচার পায়, এটা প্রত্যাশা করি আমি।‍‍`

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আক্তারুজ্জামান জানান আদালতের নির্দেশ পালন করতে হবে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ‍‍`কেনো তার নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে তা খুঁজে বের করে এর আইনি প্রক্রিয়াগুলো জানতে হবে আমাদের।‍‍`

তৎকালীন উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা এমিরেটস অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরীর কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালের পর অনেক বছর পার হয়ে গেছে। দুই যুগ আগের কথা কে মনে রাখে?

Link copied!