বজ্রপাতে প্রাণহানী রোধে ভিন্নধর্মী পরিকল্পনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৩, ২০২১, ০৬:৫৮ পিএম

বজ্রপাতে প্রাণহানী রোধে ভিন্নধর্মী পরিকল্পনা

দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাতে প্রাণহানী রোধে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির সময় কৃষকদের জন্য ছাউনি ও তালগাছ লাগানোর পাশাপাশি লাইটার অ্যারেস্টার বসান হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কমে আসবে।

শতাধিক মানুষের মৃত্যু

গত সাড়ে ৯ বছরে বজ্রপাতে দেশে আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরের সাড়ে পাঁচ মাসে বজ্রপাতে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে-ঘাটে গাছ লাগানোর পাশাপাশি বজ্রপাতের পূর্বাভাস পেতে অ্যারেস্টার বসানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিসংখ্যান বলছে, বজ্রপাতে প্রতিবছর গড়ে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জন মারা গেছে। আগের বছর ২০১৭ সালে মারা গেছে ৩০১ জন। গেল বছর মারা গেছে ২১১ জন।

৩৫ লাখ তালগাছ ও অ্যারেস্টার স্থাপিত হবে

বজ্রপাতের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বজ্রপাতে সবচেয়ে মারা যাচ্ছেন বেশি কৃষক। খোলা মাঠে কিংবা ফসলি জমিতে কাজ করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। এর সমাধানে জমির আইলে ৩৫ লাখ তালগাছ রোপণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। পাশাপাশি সারাদেশে তিনশোর বেশি পূর্বাভাস কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা ভাবছে সরকার।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোহসীন জানান, হাওর অঞ্চলের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে।

 Arester

ছবি: বিভিন্ন স্থানে লাইটার অ্যারেস্টার বসানো হবে।

জানা গেছে, হাওর অঞ্চলে মাঠে কৃষকদের জন্য আশ্রয় ছাউনি স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে দুটি উপজেলায় পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেখা হবে। সফলতা এলে তারপর এগুনো যাবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাওর অঞ্চলের পাশাপাশি যে সব এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছেন, সে সব এলাকায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। সেভাবেই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে আশঙ্কা বেশি 

এ অঞ্চলের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। গত এক দশকে মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যান সরকারকে ভাবিয়ে তুলছে। বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি ঠেকাতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার। এ সব প্রকল্পে থাকছে বজ্রপাত শোষণে অ্যারেস্টার স্থাপন, বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা পেতে বিশেষ প্রযুক্তি স্থাপন এবং কৃষকের জন্য আশ্রয় ছাউনি নির্মাণ।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোহসীন বলেন, বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির আইলে তালগাছ রোপণের কাজ চলমান। পাশাপাশি বজ্রপাত পূর্বাভাস ও আশ্রয় ছাউনি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

বজ্রঝড়ের স্থায়ীত্ব ৩০ মিনিট

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বজ্রপাত কিংবা বজ্রঝড়ের স্থায়ীত্ব সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট। তাই ছাউনি নির্মাণ করে মানুষের প্রাণহানি কমানো সম্ভব। অর্থাৎ কংক্রিটের তৈরি ছাউনি তৈরি করা হবে, ঝড় শুরু হলে পশু নিয়ে কৃষকেরা সে ছাউনিতে আশ্রয় নেবেন। ঝড় থেমে গেলে মাঠে ফিরে যাবেন। এমন পরিকল্পনা থাকছে প্রকল্পে।

জানা গেছে, ছাউনি নির্মাণের পাশাপাশি বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করারও চিন্তা করা হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অ্যারেস্টার বসানো হবে। এ যন্ত্র বজ্রপাত শোষণ করে নেবে। স্পেনের এ প্রযুক্তি বজ্রপাতের ত্রিশ মিনিট আগেই পূর্বাভাসও দিতে পারে। এটি স্থাপন করা গেলে এতে মৃতের হার কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বজ্রপাতে বছরে মৃত্যুর সংখ্যা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে ২ হাজার ২৭৬ জন। ২০১১ সালে মারা গেছে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে মারা গেছে ২০১ জন, ২০১৩ সালে মারা গেছে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে মারা গেছে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে মারা গেছে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে মারা গেছে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে মারা গেছে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে মারা গেছে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে মারা গেছে ১৯৮ জন, ২০২০ সালে মারা গেছে ২১১ জন এবং ২০২১ সালের জুনের এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১০৭ জন। যদিও বেসরকারি হিসেবে এই সাড়ে পাঁচ মাসে মারা গেছে ২৩০ জন।

পরিকল্পনাতেই সীমাবদ্ধ

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো। ব্যয় বহুল হলেও ভবিষ্যতে এটি স্থাপন করা যায় কীনা তা ভেবে দেখা হচ্ছে। তবে এ সব এখনও পরিকল্পনায়ই আটকে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু হাওরের জন্য আপাতত একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। আলাদা করে অ্যারেস্টারের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। ছাউনির জন্য আরেকটা প্রকল্পের চিন্তা করা হচ্ছে। তালগাছ রোপণের প্রকল্প চলমান রয়েছে।

Link copied!