মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ১৩, ২০২২, ১১:৫০ পিএম

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ২০২১ সালে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলোকে প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশ সরকার।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’–এ  এতথ্য জানা গেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকার অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, যারা কোভিড-১৯ মহামারিতে সরকার বা এর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে।

সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, “বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে একটি হতাশাজনক বার্তা দিয়েছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার শাস্তি দেওয়া হবে। তবু সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী এবং অধিকারকর্মীরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব বাধাকে তুলে ধরেছেন।” বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক মানুষ এই প্রতিবন্ধকতাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

১০০টি দেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয় পর্যালোচনা করে তৈরি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ প্রচলিত অভিজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, “স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গ্রেপ্তার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে গণতন্ত্রের আহ্বান এখনো শক্তিশালী রয়েছে।”

২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মোট ছয়বার তার জামিন আবেদন নাকচ হয়।প্রতিবেদনে প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিষয়টিও স্থান পায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বেছরের মে মাসে, কোভিড-১৯ মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে, এমনকি সরকারের সমালোচনাকারী প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করেছে।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপজ্জনক আবহাওয়াপ্রবণ পরিস্থিতি রয়েছে এবং পর্যাপ্ত সেবার অভাব রয়েছে সেই ভাসানচর দ্বীপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কার্যক্রম শুরু করার উদ্দেশ্যে, সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রসঙ্গটি স্থান পেয়েছে।

গত বছরের দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা ও হতাহতের ঘটনাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, পুলিশ যখন বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গুলি চালায়, তখন চারজন ব্যক্তি নিহত হন। বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে অন্তত আরও তিনজন মারা গেছেন। শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ সরকার এখনও একটি যৌন হয়রানি বিল পাস করতে পারেনি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

Link copied!