রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে স্বাগত জানাল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ২৩, ২০২২, ০২:২৩ পিএম

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে স্বাগত জানাল বাংলাদেশ

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে চলমান মামলায় দেশটির আপত্তি খারিজ করে দেওয়া আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) রায়কে স্বাগত জা‌নি‌য়েছে বাংলা‌দেশ। শুক্রবার এক বিবৃ‌তি‌তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বার্তা দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইসিজের রায় আইনি ও পদ্ধতিগত ভিত্তিতে মিয়ানমারের চারটি প্রাথমিক আপত্তি এক যোগে প্রত্যাখ্যান করেছে। এতে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি টেকসই সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূ‌মিকা রাখ‌বে ব‌লে বাংলা‌দেশ আশা কর‌ছে। এ বিচারে রোহিঙ্গাদের বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধার করে মিয়ানমারে তাদের নিজভূ‌মিতে প্রত্যাবাসনের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার বিষয়ে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তি শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)।  

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার তোলা আপত্তি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) নাকচ হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির পথ তৈরি হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারকে এই বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। তাতে আপত্তি তুলে মিয়ানমার দাবি করেছিল, আইসিজেতে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করার এখতিয়ারই গাম্বিয়ার নেই।

নেদারল্যান্ডসের হেগে শহরে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস গত ২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি করে। তার ভিত্তিতে শুক্রবার মিয়ানমারের আপত্তি নাকচ করে জাতিসংঘের এ আদালতের ১৩ বিচারকের প্যানেল সিদ্ধান্ত দিয়েছে, ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক জেনোসাইড কনভেনশনে সই করা সব দেশেরই দায়িত্ব হল গণহত্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা। আর সেসব দেশ যখন কোথাও গণহত্যার অভিযোগ করে, তার ওপর শুনানি করার এখতিয়ার এ আদালতের রয়েছে।

সার সংক্ষেপে বলা হয়, জেনোসাইড কনভেনশনে সই করা দেশ হিসেবে এ আদালতে মামলা করার এখতিয়ার গাম্বিয়ার আছে।

রয়টার্স লিখেছে, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস এখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির আয়োজন করবে, যার নিষ্পত্তি করতে বহু বছরও লেগে যেতে পারে।

পাঁচ বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়, তার মধ্য দিয়ে দেশটি ১৯৪৮ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে গাম্বিয়ার করা মামলায়।

গাম্বিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশের একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করার পর দেশটি এই মামলা করে। মিয়ানমারে চালানো গণহত্যা রোধ ও রক্তপাত বন্ধে এই মামলায় ৫৭ জাতির সংগঠন ওআইসির সমর্থন রয়েছে।

জাতিসংঘের আলাদা একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। মিয়ানমারের এই নির্যাতন ছিল ‘গণহত্যামূলক কাজ’।

আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। তবে সেই রায় মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে।

Link copied!