সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিতে লাগবে এক মাস: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১৯, ২০২৩, ০৬:১৩ এএম

সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিতে লাগবে এক মাস: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ বাংলাদেশ সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এই সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিতে গেলে এক দিনে হবে না, এক মাস লাগবে। যেখানে যাবেন সেখানে দুর্নীতি। এখন তারা পুরো বাংলাদেশের মানচিত্র খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে। তাদের দুর্নীতির পুরোচিত্র খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।’

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে ও সরকারের পদত্যাগসহ দশ দফা দাবিতে’ যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই সমাবেশ হয়।

গত ১৪ বছরে বিদ্যুৎ, সেবাসহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির একটি খন্ডচিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মূলনীতি হলো টাকা পাচার আর দুর্নীতি। গত ১৪ বছরে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। বালিশ, পর্দা, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাসিনো কাণ্ড, ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার লুট, অর্থপাচার, মেগা প্রজেক্টে মেগা কেলেংকারি-একটার পর একটা ঘটে চলছেই।

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। কেবল দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের গোপনে কেনা প্রপার্টির অর্থমূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। সব টাকা পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে লুট করে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে যাবেন সেখানেই দুর্নীতি। ইউনিয়ন পরিষদে যাবেন, আদালতে যাবেন সবখানেই দুর্নীতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। সেখানেও ঘুষ দিতে হয়। একজন পিয়নের চাকরির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কারণ এ সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। দেশের আদালত প্রাঙ্গণেও এ সরকার ভোট চুরির রূপ দেখিয়েছে’।

বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রকে এখন সংস্কার করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। এরপর ১০ দফা আন্দোলনকে নতুনভাবে সাজাতে হবে’।

হজের প্যাকেজ এত কেন-প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘হজের ব্যাপারে দুষ্টামি করা ওদের পুরোনো অভ্যাস। সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদের ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা আর পাকিস্তানে ৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বিমান চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, সেবা খাত, বিদ্যুৎখাত, আদানি কোম্পানির সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি, টাকা পাচার, বেগমপাড়া ও সেকেন্ড হোম, সুইস ব্যাংক, ইডিএফের আড়ালে ৭০০ কোটি ডলারের দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পে মেগা চুরি, পদ্মা সেতু, পাতাল রেল, মেট্রো রেল, রেলওয়ে দুর্নীতি, স্যাটেলাইট প্রকল্পসহ আরও অর্ধশতাধিক সেক্টরে অনিয়ম আর লুটপাট হয়েছে। 

বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুপুরের আগে থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্যাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ আজম খানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Link copied!