সাইবারবুলিং বনাম পরীমণি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ১৫, ২০২১, ০৫:৪৯ এএম

সাইবারবুলিং বনাম পরীমণি

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনি রবিবার(১৩ জুন) রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তাকে ধর্ষণ ও হত্য্যাচেষ্টার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানায়।

সোমবার (১৪ জুন) সংবাদ সম্মেলনে এক আবাসন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছে। মামলা দায়েরের পর প্রধান অভিযুক্তকে এক গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে ঘটন জানাজানি হওয়ার পর থেকেই সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। নেতিবাচক, ইতিবাচক দু’রকম প্রতিক্রিয়াই দেখা গেছে। সেসব প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করে বলেই যায় এ ঘটনায় সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন পরীমনি।

নেটিজেনদের একটি বড় অংশ এই অভিনেত্রিকে আক্রমণ করে বিভিন্ন অশ্লীল মন্তব্য করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের ঘৃণ্য ও উসকানীমূলক মন্তব্য করেছে।

অন্যদিকে, চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নির্মাতারা ইতোমধ্যে পরীর পাশে দাড়িয়ে #জাস্টিসফরপরীমণি নামের নতুন এক ট্রেন্ডিং শুরু করেছে। তারা বিষয়টির দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

 পোস্টটি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হ্যাশট্যাগটি বেশ কয়েক হাজারবার শেয়ার করা হয়েছে।

এ ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরে তিনি তার বনানীর বাসায় একটি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন যে উত্তরা ক্লাব লিমিটেডের প্রাক্তন সভাপতি নাসির ইউ মাহমুদ এবং অমি নামের এক ব্যবসায়ী তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করতে চেয়েছিল।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পরই রাজধানীর উত্তরা থেকে নাসিরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সাভারের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)

নিজের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করায় এই অভিনেত্রী এখন পুলিশ সুরক্ষায় রয়েছেন।  অবশ্য অভিযুক্ত নাসিরের বক্তব্য, এই অভিযোগগুলি ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘বানোয়াট।’ তিনি আরও বলেছিলেন যে, ১০ জুন মধ্যরাতে উত্তরা নৌকা ক্লাবে আসার সময় পরীমণি ও তার বন্ধুরা মদ্যপ ছিল।

জানা যায় গত বুধবার রাতে পরীমণি ও তার বন্ধুরা সেদিন গভীর রাতে বের হয়েছিল এবং অমি নামের এক পারিবারিক বন্ধু পরীকে ক্লাবে নিয়ে গিয়েছিল। এরপরই এসকল ঘটনা ঘটেছে।

তদন্ত বর্তমানে চলমান রয়েছে তবে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থামেনি এবং বাংলাদেশী নেটিজেনদের একটি বিরাট অংশ এই ঘটনায় ভিকটিমকে দায়ী করছে এবং বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করে তাকে হয়রানি করছে। এই প্রতিবেদনের শোবিজ টিম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের, অভিনেতা এবং মিডিয়া পেশাদারদের সাথে তাদের মতামত শোনার জন্য কথা বলেছেন। 

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম দ্য রিপোর্টের সাথে কথোপকথনকালে বাংলাদেশের নেটিজেনদের মধ্যে এই নতুন ঘৃণার সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি এমন প্রথম মিডিয়া পেশাদারদের একজন যিনি নিজে ফেসবুকে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও বিবৃতি পোস্ট করেছিলেন।

তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন: ‘‘এখন প্রচুর সাইবার বুলিং হচ্ছে। চারদিক থেকে প্রশ্ন উঠেছে- এত রাতে কেন সেখানে গেল? পরীমনির জায়গায় যদি কোনো নায়ক যেত, তাহলে রাতের প্রশ্ন উঠতো না। নারীর প্রতি যে বৈষম্য সেটা আমাদের জাতির মধ্যে আছে।’’

" একপেশে করে নারীকে দেখা, সবসময় তাকে অবদমনের চেষ্টা করার বিষয় আমাদের সমাজে গভীরভাবে  আছে।’

লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে যথাযথ আইন প্রণয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন এই নির্মাতা। পুরুষ যেমন কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ, নারীও যেন তেমন নিরাপদ থাকতে পারেন এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত বলে মত দেন তিনি।

 

Link copied!