১০ ডিসেম্বর: সারাদেশ থেকে সমাবেশে ৬৮ হাজার মিছিল আনবে বিএনপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৮, ২০২২, ০৫:৪০ এএম

১০ ডিসেম্বর: সারাদেশ থেকে সমাবেশে ৬৮ হাজার মিছিল আনবে বিএনপি

বিএনপির ভাষায়, দেশে চলমান সংকট সমাধান ও নাগরিক ইস্যুতে দলের ধারাবাহিক আন্দোলনের এ পর্বের শেষ হবে ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে। আর সারাদেশ থেকে এদিন প্রায় ৬৮ হাজার মিছিল গণসমাবেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে তাঁরা। এছাড়া সেদিন বিশ্ব মানবাধিকার দিবস থাকায় সরকারের ‘মানবাধিকার খর্ব করার’ বিভিন্ন চিত্র বিশ্ব মিডিয়ায় তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এরমধ্যে পরিকল্পনাগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করে চূড়ান্তভাবে মিটিংয়ের মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরবে তাঁরা।

আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে খালেদার জিয়ার কথায় দেশ চলবে— বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমানের এমন বক্তব্যে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। যদিও আমানের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন দলের নেতৃবৃন্দ। গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশের সব সাংগঠনিক বিভাগে মহাসমাবেশ শুরু করে বিএনপি।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এ মুহূর্তে দলের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের দিকে। সমাবেশগুলোতে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ সমর্থকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এদিকে জেলার নেতাকর্মীদের গ্রাম পর্যায় থেকেও গণসমাবেশে আসার জন্য ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনা মতে, ঢাকাতে প্রায় ৬৮ হাজার মিছিল নিয়ে উপস্থিত হবেন দলের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এ সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্যপণ্যের ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পাঁচজন কর্মীকে হত্যা, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা এ ধরণের পাঁচটি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করার জন্যেই এই সমাবেশ।

৬৮ হাজার মিছিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনা প্রবাহেই তৈরি হবে আগামী দিনে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, আর কোন দিকে যাবো।

সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হবে নেতৃবৃন্দ

১০ ডিসেম্বরের ওই সমাবেশে যোগ দেবেন বিএনপির তৃণমূল নেতারাও। সেন্ট্রাল ও হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা কাজ করছেন বলেও এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন কয়েকটি জেলার নেতারা।

চট্টগ্রাম বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, মহাসমাবেশ হবে আর আমরা যাবো না, এমন হতে পারে না। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা আগেই রাজধানীতে ঢুকবো।

একই কথা বলেন রংপুর বিভাগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, এত বড় সমাবেশ হবে, সেখানে যাবো না, সেটি কী করে হয়? আমরা মিছিল বের করবো। কিন্তু সরকারের বাঁধায় কতটুকু ঢাকামুখী আগাতে পারবো সেটা জানি না। তবে সেন্ট্রাল যা বলবে, সেভাবেই কাজ করবো আমরা।

মানবাধিকার দিবসে বিশ্ব মিডিয়ায় দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা

১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। এদিন সারা পৃথিবীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার হরণের জন্য রাষ্ট্র, সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞাও দেয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব ও র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে নানা দিবস ও ইস্যূ নিয়ে মাঠে সোচ্চার বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে পরিকল্পনা আঁটছে দলটি। বিএনপি সূত্র বলছে, যুগপৎ আন্দোলনের জন্য শরিকদের সাথে প্রথম দফায় আলোচনা শেষ করেছে বিএনপি। এখন দ্বিতীয় দফায় আলোচনা চলছে। সরকার পতনের আন্দোলনের ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে তাঁরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চূড়ান্ত রূপরেখাও প্রস্তুত। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ থেকে কর্সমসূচি অথবা গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধান্ত আসবে।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে স্মরণকালের সব চেয়ে বড় সমাবেশ হবে। তবে নতুন কর্মসূচি কী আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। দলের নীতিনির্ধারকেরা  বৈঠক করে আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন। যদি সরকার কর্মসূচিকে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দেয় তবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আসবে।

কোথায় মহাসমাবেশ তা ঠিক হয়নি

ঢাকার মহাসমাবেশ কোথায় করবে তা এখনো ঠিক করেনি বিএনপি। দেখা গেছে, ঢাকার ১৬টি সমাবেশের ১৩টিই মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। যদিও বাকী সমাবেশগুলোতে হামলা-হাঙ্গামা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয় সমাবেশ

বিএনপি জনগণের সংকটের সমাধান ও নাগরিক ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলনে রয়েছে। প্রথম দিনে চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ আলোচনায় উঠে আসে ১০ ডিসেম্বর তারিখটি। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমানের চট্টগ্রামের সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে।

সেদিন আমান ১০ ডিসেম্বেরের কথা উল্লেখ করে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, প্রস্তুতি নিন, কর্মসূচি আসছে। কাঁচপুর ব্রিজ, টঙ্গী ব্রিজ, মাওয়া রোড, আরিচা রোড, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া সারাদেশ বন্ধ করে দেবেন। এই বাংলাদেশ চলবে না। আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কারও কথায় আর দেশ চলবে না।

এর আগে বিএনপির সাথে দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছিলেন, একটা বাংলা শব্দ বলতে পারি, চমক আছে। আপনারা মেহেরবানি করে তাঁর জন্যে প্রস্তুত থাকতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যতক্ষণ এ সরকারের পতন না হবে, এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

বিএনপির চলমান কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সারা দেশে শান্তিপূর্ণ গণ–আন্দোলন করা হচ্ছে। এই সমাবেশেই পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

Link copied!