‘সীমান্তে চুল ব্যবসায়ীদের কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে’

তুহিন কান্তি দাস

জুন ১০, ২০২১, ০৩:৩৩ এএম

‘সীমান্তে চুল ব্যবসায়ীদের কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে’

দেশের সীমান্তবর্তী এলকাগুলোতে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভারতে যাতায়াত করার কারনে তাদের থেকে এই করোনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। সীমান্ত এলাকা চুল ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বেশি থাকায় এই সমস্যা হয় বলে জানায় তারা।

সীমান্ত ঘিরে চুল ব্যবসা

চুয়াডাঙ্গার দামরহুদা উপজেলার  কুতুবপুর,মুন্সিপুর,শিবনগর,হরিরামপুর, চন্দ্রবাস, পীরপুরপোল্লাসহ একাধিক গ্রামে ফেলে দেয়া চুল প্রকৃয়াজাতকরণ হয়ে উঠেছে অনেকের রোজগারের প্রধান উৎস। এই রোজগারের উদ্দেশ্যে গ্রামের নারী-পুরুষ একত্রে অংশগ্রহণ করছেন নিয়মিত।এই ব্যবসায়িক সংস্পর্শে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে দাবি করছেন চুয়াডাঙ্গা-২(দামরহুদা-জীবননগর) আসনের সাংসদ আলী আজগর টগর।

বিকল্প পথে প্রবেশে করোনা বৃদ্ধি

চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের সাংসদ দ্য রিপোর্টকে জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় যারা বৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছেন তাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে করোনা টেস্ট এবং কোয়ারেনন্টাইন নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু চোরাইপথে যারা সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে কোন শৃঙ্খলা আরোপ সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে চুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেশি এখন। তবে আশা রাখি সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এই করোনা ধাক্কা শীগ্রই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। 

মে মাসের ৪-৬ মোট তিন দিন নিজের নির্বাচনী এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করতে যান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এই জনপ্রতিনিধি। সেখান থেকে ফিরে ৮ মে দ্য রিপোর্টকে তিনি জানান আমরা সীমান্তবর্তী সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা বেশ কিছু গ্রাম লকডাউনে রেখেছি। স্থানীয় চায়ের দোকান,ফুটপাতের টংসহ বেশ কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জনসমাগম ঘটে। আমরা সেই জনপরিসরে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত করেছি। আবার নিম্ন আয়ের এইসকল মানুষ যেন জীবিকার সংকটে বিপদে না পরে যান তাই সরকারিভাবে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়ার সিধান্ত নিয়েছি। 

চুল ব্যবসায়ীদের এলাকায় রোগী বেশি

চুয়াডাঙ্গা জেলা সিভিল সার্জন এ এস এম মারুফ হাসানও চুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা করোনা বৃদ্ধির অন্যতম কারন বলে জানান। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা যে সামাজিক দূরত্বের কথা বলছি তা মানুষ মানছে না। আবার গ্রামের মানুষ এমনিতেই মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই। যে কারণে সংক্রমণও সেখানে বেশি। এই বিবেচনায় গ্রামগুলোতে লকডাউন দেয়া হয়েছে। হতে পারে চুলের ব্যবসার জন্যেই এই সংক্রমণ অধিক পরিমাণে।

চুল ব্যবসা সীমান্ত এলাকায় রমরমা

চুয়াডাঙ্গার দামরহুদা উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেন চুলের ব্যবসা। স্বাধীনতার পর থেকে শুরু হলেও ১৯৯৯-২০ সালে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই ব্যবসা। শুরুতে অল্প কিছু মানুষ শুরু করলেও এই ব্যবসা বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়েও ভুমিকা রাখছে এই চুল ব্যবসা। চুয়াডাঙ্গার প্রায় প্রতিটি গ্রামে চুলের কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় লোকজন। প্রতিটি কারখানায় কাজ করে গ্রামের দরিদ্র নারীরা।এসব কারখানাকে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারী-পুরুষের। বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন অর্ধশত প্রতিবন্ধীও। পাল্টে গেছে এলাকার তরুণদের ভাগ্য।

Link copied!