`Bangladesh: The test case of Development’ শীর্ষক হতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অবজ্ঞা করে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র, যদি বাংলাদেশ উন্নয়ন করতে পারে তাহলে বলতে হবে পৃথিবীর যে কোনো দেশ উন্নয়ন করতে পারবে। MIT থেকে ১০ অধ্যাপকের (যার মধ্যে ৪জন নোবেলপ্রাপ্ত) লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয় এই বইটি। তাদের অভিমত ছিল বাংলাদেশ হল হাসপাতালে এমন একজন রোগী যাকে চিকিৎসা দিয়ে ভাল করা যাবে না। তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশ পরিত্যাগ করে এমন সব দেশের দিকে হাত বাড়াতে যাদের সাহায্য করে সুস্থ করা যাবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফেরার পথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘বাংলার মাটি ও মানুষ থাকলেই সোনার বাংলা হবে।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) আবারও ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ওই ভাষণেই তিনি দেশ গড়ার দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন ।
মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরইমধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ যেখানে ছিল না রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ। ছিল না কোনো শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান-কলকারখানা। অর্থ শুন্য ছিল ব্যাংকিং খাত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে।
বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত সেই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ সত্যিই অনেক আগেই সোনার বাংলায় পরিণত হতো। কিন্তু জিয়া-এরশাদ-খালেদা দেশ শাসন করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনার ধারায়। তাদেও শাসনামলে দেশ চলেছে উল্টো পথে।
দীর্ঘ ২১ বছরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালপর্যন্ত জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে দেশে স্থিতিশীলতা তৈরি হলেও ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয় ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর। দেশে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। আমরা পরিচিত ছিলাম জঙ্গিবাদের সাথে। পাঁচ বছর দাগী সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশ চালিয়েছে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকার। ওই সময় দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। সমগ্র পৃথিবীতে বাংলাদেশ একটি বন্ধুহীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।
এমনকি বিরোধী পক্ষকে শেষ করে দেওয়ার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল-যার পরিণতি আবারও সামরিক শাসন।
২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও জয়লাভ করায় গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, কার্যকর হয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায়। দেশ সাংবিধানিক ধারবাহিকতায় ফিরে এসেছে। দারিদ্র্য জয় করে বাংলাদেশ ‘স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল’ দেশে পরিনত হয়েছে।
যে দেশকে এক সময় এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য বিদেশিদের কাছে ধর্না ধরতে হতো, দেশরত্ন শেখ হাসিনার গতিশীল ও সময়োপযোগী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাইতো মহাকাশ থেকে সাবমেরিন, সীমান্ত থেকে সমুদ্র-সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ একটি অনুকরণীয় দেশ।
মিয়ানমার সেনাবহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদেও আশ্রয় দিয়ে মানবতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের চূড়ায় অবস্থান করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বমানবতার আইকনে পরিণত হয়েছেন। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ব মানবতার সবচেয়ে বড় আঘাতের শিকার তিনি হয়েছিলেন।
কিন্তু প্রতিহিংসা নয়, অহিংস পথে হেঁটেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেখিয়েছেন পথ বিশ্বকে। তাঁর সফল নেতৃত্বে আমরা পালন করেছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
গত ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা ১০দিন- যেখানে আমরা অন্য এক শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। এই করোনা মহামারির মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সকল দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাংলাদেশে এসেছেন-যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এক অনন্য নজির।
শুধু কি তাই-আমেরিকা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানী থেকে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান থেকে শুরু করে যেসব বিশ্বমানের ব্যক্তিত্ব যে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বাণী দিয়েছেন তা সমগ্র পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে।
তাই আমরা বলতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, সমগ্র পৃথিবীতে এক নন্দিত নেতার নাম, যার নেতৃত্বে ৫০ বছর পূর্ণ করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ ঝলমলে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখক: প্রতিমন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ।