জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২.০১ মিনিটে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে তিনি তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, আমি “১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এ আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।” জাতির পিতার এই মহামূল্যবান বক্তব্য থেকে এসে যায়, যে আমাদের ভাষা আন্দোলন আমাদের পথ দেখিয়েছিল আমাদের জাতিসত্ত্বা প্রকাশের সংগ্রামের এবং যখন পাকিস্তান নামে রাষ্ট্রটা সৃষ্টি হয় এবং যখন ব্রিটিশরা ভারতে দুটি রাষ্ট্র তৈরি করে গেল, একটা পাকিস্তান, একটা ভারতবর্ষ
’৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচিতে একটা সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল। সেই সাহিত্য সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া হলো যে, পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত উর্দু। তখনি কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, কয়েকজন ছাত্র মিলে মিছিল করে তখনকার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তারা গিয়েছিল এটার প্রতিবাদ জানাতে। সেখানেও কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন, তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। এবং সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি একটি সভা ডাকলেন। তমুদ্দুন মজলিসসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠন তারা মিলে সিদ্ধান্ত নিল ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে ‘ভাষা দিবস’ হিসেবে ১১ই মার্চ ঘোষণা দেয়া হলো। ১১ই মার্চ এই ঘোষণা দিয়ে, সেই দিন ধর্মঘট ডাকা হয়। এবং তারই পূর্বে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছাত্রদের দিয়ে ছাত্রলীগ নামে একটি সংগঠনও গঠন করেছিলেন। এবং সেই ছাত্রলীগকে দিয়েই কিন্তু সংগঠন, মানে ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু এবং এই ১১ই মার্চ এ ধর্মঘট করতে গিয়ে আমাদের তখন অনেক নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হন, সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও ছিলেন।
এরপর নাজিমুদ্দিন সাহেব একটা যোগাযোগ করে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাথে আলোচনা হয় এবং তিনি ওয়াদা দিয়েছিলেন যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটা তিনি পার্লামেন্টে তুলবেন এবং মেনে নেবেন। এবং ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের দাবিগুলো মেনে নেয়ার ফলে সকলে আবার ১৫ তারিখে সন্ধ্যায় মুক্তি পান।
১৬ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা, এই আমতলা এখন আমাদের যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ তার যে আউটডোর এটাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর সেখানেই ছিল আমতলা এবং সেখানে একটা সভা হয়। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং সেখানে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণ দেয়া হয়।
আর এই সংগ্রাম করতে গিয়ে বারবার কিন্তু তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন মুক্তি পেয়েছেন। কারণ সংগ্রাম পরিষদ তখন সমগ্র দেশে ছড়িয়ে যায়। এই রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে যাতে জনমত সৃষ্টি করা এবং সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য এবং এরই একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ফরিদপুরে যেয়েও গ্রেফতার হন, আবার মুক্তি পান। বারবার গ্রেফতার হয়েছেন, মুক্তি পেয়েছেন। পরবর্তীতে ঢাকায় তিনি ’৪৯ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় একটি ভুখা মিছিল হয়। তখন লিয়াকত আলী খান পূর্ববঙ্গে আসার কথা, সেই সময় এই আন্দোলনে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে গেলেন। তারপর কিন্তু অনেকে মুক্তি পেয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুক্তি পাননি। কিন্তু কারাগারে থেকেও তিনি যখনি কোর্টে অথবা চিকিৎসার জন্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আসতেন তখনি কিন্তু তিনি ছাত্রনেতাদের সাথে সাক্ষাত করতেন।
এই সাক্ষাতকারের একটা পর্যায়ে, তিনি ছাত্রলীগের তখন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নইমুদ্দীন সাহেব এবং খালেক নেওয়াজ, তাঁদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে এবং ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যে একুশে ফেব্রুয়ারি তখন প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট সেশন বসবে, তখন পার্লামেন্ট বসত জগন্নাথ হলের যে হলটা ভেঙ্গে পড়ে গিয়েছিল, আপনাদের মনে আছে অক্টোবর মাস ১৫ই অক্টোবর, ঐটাই ছিল মূলত তখন প্রাদেশিক পরিষদের মানে সংসদ ভবন, ওখানেই তখন বৈঠক হত। যেহেতু ওখানে বৈঠক হবে, ছাত্রদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে সেই ধরনের নির্দেশনা দেন এবং সেই সাথে সাথেই একটা সংগ্রাম পরিষদ আবার গঠন করা হয় ’৫২ সালে এবং সেখানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে যেন সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়, সে নির্দেশনাও তিনি দিয়েছিলেন।
কাজেই এভাবেই তিনি ঐ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তাঁর দাবি আদায়ের জন্য অনশনে যাবেন এবং ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি অনশন করা শুরু করেন, তাঁর সঙ্গে আমাদের ন্যাপে মহিউদ্দিন সাহেব (তিনিও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের) অনশন করেন। অনশনরত অবস্থায় তাঁকে ফরিদপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাঁকে ফরিদপুর জেলে নিয়ে যায় ঐ সময় স্টিমার এখানে ওয়াইজঘাট থেকে স্টিমার ছাড়ত, নারায়ণগঞ্জে স্টিমার থামত, তিনি আগেই খবর দিয়েছিলেন যে নারায়ণগঞ্জের নেতৃবৃন্দ যেভাবে হোক ওনার সঙ্গে যেন দেখা করে। সেখানেও তিনি বসে তাদেরকে চিরকুট পাঠান এবং অনেকের সাথে সাক্ষাত হয়, সেখানেও নির্দেশ দিয়ে যান যে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
ভাষার আন্দোলন যেন থেমে না থাকে, সেই নির্দেশনাও তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন। কাজেই এইভাবেই তিনি এই আন্দোলনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, কারাগারে বসেও কিন্তু এই আন্দোলন সম্পর্কে সব সময় সচেতন ছিলেন।
’৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি যখন মিছিল বের হয়, সেখানে গুলি চলে এবং আমাদের শহীদরা রক্ত দিয়ে এই ভাষা আন্দোলনকে একটা জায়গায় নিয়ে যান। অথচ সেই ’৪৮ সাল থেকে আন্দোলন শুরু ’৫২ সালে এসে বুকের রক্ত দিয়ে রক্তাক্ষরে ভাষার অধিকারের কথা আমাদের শহীদরা লিখে গিয়েছেন।
এরপর ’৫৬ সালে এসে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন সোহরাওয়ার্দী সাহেব, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। সেখানে অনেক শর্ত মেনেই তাঁকে হতে হয়েছিল। যাই হোক, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হয়ে পাকিস্তানের জন্য প্রথম সংবিধান রচনা করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র হবার পর কিন্তু আর এর পূর্বে পাকিস্তানের সংবিধান রচিত হয়নি। এই সংবিধানে তখন উর্দুর সাথে বাংলাকে রাষ্ট্রাভাষা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়।
কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ আসার পরেই কিন্তু যে শাসনতন্ত্র পাকিস্তানে রচিত হয়েছিল, সেখানেই বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। আর সেই সরকার ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়, ছুটি ঘোষণা করা হয়, সরকারী ছুটি পালন করার জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে, প্রকল্প নিয়ে কাজও শুরু করে।
’৫৮ সালে আইয়ুব খান তখন মার্শাল ‘ল’ জারি করে। আইয়ুব খান ছিল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান, তিনি একাধারে সেনাপ্রধান আবার সেই সাথে নিজেকে রাষ্ট্রপতিও ঘোষণা দেয়, ক্ষমতা দখল করে।
জাতির পিতা যে কথাটা বলেছিলেন, যে আমাদের ভাষা আন্দোলন এটা শুধুমাত্র যে ভাষার জন্যই তা নয়; এখানে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ আন্দোলন ছিল। এই ধারাবাহিকতায় কিন্তু জাতির পিতা একটা জাতিকে ধীরে ধীরে আন্দোলনের পথ বেয়ে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যে ৬ দফা দিয়েছিলেন, সেই ৬ দফা ছিল বাঙালী জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সোপান।
আমি জানি না, উনার জীবনীটা পড়লে খুব অদ্ভুত লাগে। ’৫২ ভাষা আন্দোলনের যে সংগ্রাম তিনি ’৪৮ সাল থেকে শুরু করলেন এবং একের পর এক গ্রেফতার হলেন। এরপরে যখন ’৪৯ সালে তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন তারপর কিন্তু আর মুক্তি পান নাই। ’৪৯, ৫০, ৫১ এরপর ’৫২ সালে যেয়ে ২৭ শে ফেব্রুয়ারি যখন তিনি অনশনরত অবস্থায় প্রায় মৃতপ্রায়, তখন তিনি ২৭ শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান।
আবার ’৬৯ সালে যখন তাকে গ্রেফতার করা হলো, তারপর তিনি মুক্তি পেলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ সালে। ’৬৬ সালে গ্রেফতার করা হয়, ’৬৬ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা দেয়া হলো এবং অনেক সাজাও দেয়া হলো। তারপর ’৬৮ সালে ১৮ই জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো। ১৮ই জানুয়ারি যখন নিয়ে যাওয়া হয়, আমরা পরিবারের কেউ জানি না কোথায় নিয়ে গেছে, কেমন আছেন, বেঁচে আছেন কিনা? কোন খবরই আমরা পায়নি। যখন আগরতলা মামলা শুরু হয়, ঐ কোর্টে প্রথম দেখা। কাজেই, এভাবে বারবার যে আঘাত এসেছে, তারপরও তিনি কিন্তু একটা নীতি নিয়ে, আদর্শ নিয়ে, বাঙালী জাতির স্বাধিকার আদায়, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কিন্তু সংগ্রাম করে গেছেন। আর সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই আজকে আমরা এই বাংলাদেশে, স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।
২১ বছর পর আমরা সরকারে আসি। আমরা আসার পর আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি দেশের উন্নয়নে এবং আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সেই প্রস্তাবটা যখন করা হয়েছিল, আপনারা শুনেছেন যে, সালাম আর রফিক, তারাই আরো কয়েকটি দল-দেশের প্রতিনিধি মিলে ঐ যে ভালবাসি মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাব নেই এবং সেখানে ১৭ই নবেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোতে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। আজকে আমরা যখন ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, পৃথিবীর বহু দেশের বহু জাতির মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। কাজেই সেই মাতৃভাষাগুলোকে সংরক্ষণ করা, সেই মাতৃভাষা গুলির চর্চা করা, মাতৃভাষা গুলির নমুনা রাখা এবং একটা ভাষা জাদুঘর, আমরা কিন্তু সেই জাদুঘর তৈরি করেছি। এই প্রতিষ্ঠানটা আমি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আর তারা তৈরী হতে দেয়নি, সেখানেই বন্ধ করে রেখেছিল। আমি ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার সেটা প্রতিষ্ঠা করি। কাজেই একদিক দিয়ে বোধহয় ভাল, কারণ আমি এসে আমার হাতে শুরু ছিল, আবার আমরা এসেই সেটাকেই প্রতিষ্ঠা করেছি। আজকে সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন মাতৃভাষা আমরা সংগ্রহ করছি, সেখানে গবেষণার সুযোগ আছে এবং হারিয়ে যাওয়া ভাষাগুলোকেও আমরা এখানে সংরক্ষণ করছি। ভাষা জাদুঘর একটা আমরা তৈরি করে দিয়েছি। মনে হয়, বাংলা সারা বিশ্বব্যাপী আজকে বাংলাদেশীরই আজকে দায়িত্ব পড়েছে মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করার।
মাতৃভাষায় শিক্ষা আমি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে জানলাম যে, আমরা সাবসিডিয়ারি হিসেবে একটা মূল সাবজেক্ট আমরা নিই অথবা অনার্স আমরা নিতাম। কিন্তু সাথে সাথে ২টি বিষয় আমরা সাবসিডিয়ারি নিই। আমি বিষয়টি জানতাম না যে, বাংলাকে আমরা যখন অনার্স করতাম তখন বলত সাবসিডিয়ারি এখন বলে মেজর অর মাইনর। কিন্তু বাংলা ভাষা নাকি শেখা যায় না, নেয়া যায় না। এটা আমি জানি না, আমার মনে হয়, এ বিষয়ে ইউজিসির সাথে, বা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আলোচনা করতে হবে, যে এটা কেন? বাংলা ভাষার প্রতি এই অবহেলা কেন?
আমরা আমাদের ভাষা আন্দোলনের এই শহীদের রক্তের পথ বেয়েই কিন্তু লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ওই ১৫ আগস্টের খুনীদেরকেও পার্লামেন্টে ভোট চুরি করে বসানো হয়েছিল। আর স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, সাজা কার্যকর হয়েছে, তাদেরকে যারা মন্ত্রী বানিয়েছিল, আমার লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তাদের হাতে যারা তুলে দিয়েছিল, জাতি যেন কোনদিন তাদেরকে ক্ষমা না করে। সেটাই আমার জাতির কাছে আবেদন। যারা আমার মা-বোনকে রেপ করেছে, যারা গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, লুটপাট করেছে সেই যুদ্ধাপরাধী আর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে, তাদের বিচারের রায় আমরা কার্যকর করেছি। যারা এদেরকে মর্যাদা দিয়েছিল, যারা এদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছিল তাদের ব্যাপারে জাতিকে সচেতন থাকতে হবে। তাদেরকে কিন্তু জাতি কোনদিন ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা করবে না, জাতির কাছে আজকের দিনে আমার এটাই আবেদন থাকলো।
আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে জাতির পিতার নেতৃত্বেই এই বাংলাদেশ। আমরা নিম্নআয়ের দেশ হিসেবে একটা স্বীকৃতি পেয়েছিলাম, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি অর্থাৎ একধাপ বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়েছে। বাঙালী জাতি আজকে মর্যাদা পেয়েছে। এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, শহীদদের প্রতি এটা আমাদের অঙ্গীকার যে, এই অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রাখবো। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষে ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় শেখ হাসিনার ভাষণের অংশবিশেষ।