এপ্রিল ১৮, ২০২৪, ১০:১৪ পিএম
দলের এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয় এবং ‘মাই ম্যান’ এবারের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: প্রার্থী হতে পারবেন না এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়রা
দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এবং তা মেনে চলার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। উপজেলা নির্বাচন যাতে প্রভাবমুক্ত ও স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ হয়, প্রকৃত অর্থে সে জন্যই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে পক্ষপাতমুক্ত করতেই নেওয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, এই নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার। তাছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একজন এমপি তার ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সভাপতির এমন নির্দেশ বলে মনে করছেন দলীয় হাই কমান্ড।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়টি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল। একান্ত সাক্ষাৎকারে এবারের উপজেলা নির্বাচনে একাধিক এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থিতার বিষয়ে জানান তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে যেটা মনে করছি, সরাসরি ডিস্ট্রিক্ট ট্যুরে যাবো। তাদেরকে বলে আসবো। তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনায়ও বসতে পারি।’
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থার বার্তা দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করলে অবশ্যই দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এবার উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে ৪ পর্বে। প্রথম পর্বে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে। দলীয় সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে প্রথম পর্বে ১৪ উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয় এবং ‘মাই ম্যান’ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এমপি-মন্ত্রীদের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত উপজেলা নির্বাচনের ৪ পর্বের জন্যই প্রযোজ্য।
নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীর প্রার্থী হওয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘এমপির ছেলে ক্যান্ডিডেট হবে, নেতার ছেলে ক্যান্ডিডেট হবে, মন্ত্রীর মেয়ে ক্যান্ডিডেট হবে- এটা মোটেও শোভনীয় নয়।’
সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়ে বসেছেন স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধেও প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এসব খবরসহ নানা বিভেদের তথ্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েেন তিনি। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয় এবং ‘মাই ম্যান’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
দলীয় সভাপতির নির্দেশনা পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডিতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের বিষয়টি দলের নেতাদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। অনানুষ্ঠানিক ওই বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও উপ-দপ্তর সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
‘থাকতে পারবে না সরাসরি বলা হয়নি তাদের’
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচনে একাধিক এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল বলেন, ‘থাকতে পারবে না সরাসরি বলা হয়নি তাদের। (শুধু বলা হয়েছে, এমপি-মন্ত্রীদের) যারা আত্মীয়-স্বজন, তারা যেন না দাঁড়ায় (প্রার্থী না হয়)। নির্বাচনে আত্মীয়-স্বজন যারা আছে তারা যেন নির্বাচন না করে- মন্ত্রীর (ওবায়দুল কাদের) থেকে এমন নির্দেশনা আমরা পেয়েছি।’
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যদি তারা নির্বাচন করে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা যারা রাজনীতি করি, পার্টি করি, নেত্রী আমাদের সবাইকে বলছেন, কেউ তাদের মাই ম্যান দেবে না ও এমপি-মন্ত্রীসহ জেলা পর্যায়ে সবাইকে বলে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
যদি তারা (এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়রা) নির্বাচনে থাকে কিংবা নির্বাচন অংশগ্রহণ করে এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি এখনই গণমাধ্যমে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটা অনেক পরের বিষয় এখন বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলা যাবে না তবে দলীয় কমান্ড অমান্যের অবকাশ নেই।’
এস এম কামাল বলেন, ‘আগে দেখি তারা শোনে কিনা। সিদ্ধান্ত প্রণেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা তার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করি।’
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘যার জনপ্রিয়তা বেশি এবং আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও দুঃসময়ের কর্মী (যারা), যাকে জনগণ চায় তাকেই (ভোট) দেওয়া হবে।’
যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজন দাঁড়াচ্ছেন ভোটে
৮ মে থেকে ধাপে ধাপে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনে নরসিংদীর পলাশের নির্বাচিত এমপি আনোয়ার আশরাফ খানের শ্যালক মো. শরিফুল হক (পলাশ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের শ্যালক (সিংড়া), মাগুরা-২ আসনের এমপি শ্রী বীরেন শিকদারের ছোট ভাই বিমল শিকদার, বগুড়ার এমপি শাহদারা মান্নানের ভাই ও ছেলে পৃথক দুই উপজেলায়, সুনামগঞ্জের এমপি এম এ মান্নানের ছেলে শাহাদাত মান্নান (শান্তিগঞ্জ), সুনামগঞ্জের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে ফজলে রাব্বি, মানিকগঞ্জ সদরের এমপি জাহিদ মালেকের ফুফাত ভাই ইসরাফিল হোসেন, কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মো. মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাত ভাই আতাউর রহমান (কুষ্টিয়া সদর), সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শফিকুল ইসলামের ‘মাই ম্যান’ এবং অন্যতম আত্মীয় বেনু (উল্লাপাড়া), এমপি মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশীক আলী (হাতিয়া), নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক শাবাব চৌধুরী (সুবর্ণচর), টাঙ্গাইল-১ আসনের ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের খালাত ভাই (ধনবাড়ীয়া) এবং তার একজন ‘মাই ম্যান’, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই নূর ই আলম (নাজিরপুর) এবং বরিশাল-১ আসনের এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ছেলে আশিক আব্দুল্লাহ (আগৈলঝাড়া)।
দেশে ৪৯৫ উপজেলায় এবার ৪ ধাপে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬১ ও তৃতীয় ধাপের ১১২ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।