কেন্দ্রে দেওয়ার মত পোলিং এজেন্ট পাচ্ছে না অনেক প্রার্থী

অভিশ্রুতি শাস্ত্রী

জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৭:৩১ এএম

কেন্দ্রে দেওয়ার মত পোলিং এজেন্ট পাচ্ছে না অনেক প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিপাকে রয়েছে দলীয় প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের জোটের সাথে শরিক নয় এমন দলগুলোর প্রার্থীরা পোলিং এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ পর্যন্ত করেছে। তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে। তবে কোন প্রার্থী যদি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে না পারে তাহলে ভোট গণনায় রিটানিং কর্মকর্তা কিংবা প্রিজাইডিং অফিসারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।

তৃণমূল বিএনপির অর্ধেক প্রার্থী আদৌ ভোটে নেই

অনেকটা ঘটা করেই নির্বাচনে ২৮০ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল বিএনপি। তবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার পরপরই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আর যোগাযোগ রাখেনি। এমনিকে তাদের সাথে প্রার্থীরা যোগাযোগ করলেও কোন ধরনের সাহায্য করতে পারবে না বলে জানায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সব মিলিয়ে প্রায় শতাধিক প্রার্থী জানায় তারা প্রচার-প্রচারণা করলেও পোলিং এজেন্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছে না।

সিরাজগঞ্জ – ২ আসনের প্রার্থী মো: সোহেল রানা বলেন, পোলিং এজেন্ট দিতে পারলাম না টাকার অভাবে আমাদের এতো দিনের পরিশ্রম শেষ পর্যন্ত বিফলে যাবে। এটা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের কোন তদারকি পর্যন্ত করেনি। 

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ নাঈম হাসান বলেন, আমরা প্রচার-প্রচারণার মাইকিং, লিফলেট, পোস্টার, ফেস্টুন, উঠান বৈঠক ও ভালোমতো গণসংযোগ করলাম কিন্তু আসলে শেষের দিকে এসে আমরা আর্থিক কোন সহযোগিতা পেলাম না। নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছি।

দলটির মহাসচিব মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি করার চিন্তা কোন প্রার্থীর থাকা অনুচিত। আমরা জনগণের স্বার্থে নির্বাচন করছি বিধায় কোন ধরনের আর্থিক লেনদেনে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। অনেকে ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা করে এখন এগুলো বলছে।

পোলিং এজেন্ট না থাকলে ভোট গণনার সময় কী হবে?

ভোট গণনার বিবরণী ও অন্যান্য প্যাকেটে স্বাক্ষর দান ও অনুলিপি গ্রহণ পোলিং এজেন্টের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। পোলিং এজেন্ট কেন্দ্রে কোন অনিয়ম বা অসাদাচরণ দেখলে প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করবে। তবে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত নোটিশ প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট প্রেরণ করতে হবে। 

কিন্তু কোন প্রার্থী যদি পোলিং এজেন্ট নিয়োগ না দিতে পারে অথবা তার পোলিং এজেন্ট অনুপস্থিত থাকে তাহলে রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য অর্পিত রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাদি বৈধভাবে সম্পাদিত হয়েছে বলে গণ্য হবে বলে জানায় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ২৩ নং অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে, ‘যদি কোন প্রার্থী অথবা নির্বাচনি এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্ট রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক কোন কাজ সম্পাদনের জন্য ধার্যকৃত সময় এবং স্থানে উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হন, তাহলে অনুপস্থিতি উক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক বৈধভাবে সম্পাদিত ওই সকল কাজ আইনসিদ্ধ বলে গণ্য হবে। এমতাবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণকে স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, আইন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য অর্পিত রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাদি বৈধভাবে সম্পাদিত হয়েছে বলে গণ্য হবে। সুতরাং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কিংবা পোলিং এজেন্টকে প্রার্থীর স্বার্থেই বিধিসম্মতভাবে উপস্থিত থেকে উল্লিখিত নির্বাচনি কার্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

তবে যদি কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কিংবা নির্বাচনি এজেন্ট কিংবা পোলিং এজেন্ট ভোট গণনার সময় অথবা ফলাফল একত্রীকরণের সময় উপস্থিত না থাকেন অথবা কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উক্ত প্রক্রিয়ায় কোন এজেন্ট নিয়োজিত না করেন, তবে উক্তরূপ অনুপস্থিতির কথা লিখিতভাবে রেকর্ড করার ব্যবস্থা করতে হবে।’

সরছে বিএনএমের প্রার্থীরাও

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত নোঙর প্রতীকের প্রার্থী সুকৃতি কুমার মণ্ডল। 

সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখার জন্য দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলাম; কিন্তু সুষ্ঠু স্বাভাবিক এবং আইনগত দিকে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় আমি আমার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।

সেই সাথে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনএমের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শামছুল আবেদীন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। 

শরিক ছাড়া কূল পাচ্ছে না জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা

জাতীয় পার্টির অন্তত ৩০ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। প্রার্থীর অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতারা তাদের খোজঁ-খবর নিচ্ছে না, দলীয় ফান্ড থেকে তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা ও আসন ভাগাভগির কারণে সমঝোতার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ। 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, মিডিয়ার সামনে আমাদের দোষ দিয়ে যারা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন তা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা নিজেদের স্বার্থে সরে যাচ্ছেন। দলের সবার আর্থিক অবস্থা সমান নয়। এ কারণে কেউ কেউ প্রচারণায় নেই, আবার কেউ সরেও দাঁড়াচ্ছেন। তবে তা খুব বেশি নয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আসলে প্রার্থীদের কথা বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে যারা শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছে তারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছে। অনেকেই নতুন দলগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে তারা যে আশা নিয়ে এসেছে সেগুলো মিটছে না। বিএনপিসহ আরও দল না থাকায় সেই ধরনের প্রতিদ্বন্দিতা কিংবা ভোট ফ্যাক্টর হয়েও দাড়াতে পারছে না। তাই একক ভাবে জয়ী হবেনা এটা যখন বুঝতে পেরেছে তখন এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে।

Link copied!