গতকাল বৃহস্পতিবার দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করেছে বিএনপি। সেই উপলক্ষে শুক্রবার (৩১ মে) নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাদ জুমা গণ দোয়া সম্পন্ন হয়েছে।
এতে দেশকে আবারও তলাবিহীন করেছে সরকার অভিযোগ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। নয়াপল্টনে গণ দোয়ার আগে তিনি বলেন, “আগে শুনতাম বর্গিরা দেশে এসে লুট করে নিয়ে চলে যেত। এখন বর্গিরাই ক্ষমতায় বসে গেছে। তারা লুট করে চলে যায় না, সম্পদ বিদেশে পাচার করে দেয়। সেই বর্গিরা ক্ষমতায় আছে এখন।”
এ সময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা আব্বাস। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “১ লিটার তেলের দাম আড়াইটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই তো দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আড়াই টাকা তেলের দাম বাড়ানো মানে সব জিনিসপত্রের দাম আবার বেড়ে যাওয়া। সব জায়গায় এর প্রভাব পড়ে।”
আরও পড়ুন: ‘বিএনপিবিরোধী’ অ্যাকাউন্ট, পেজ সরাল ফেসবুক
তিনি আরও বলেন, “যারা ভাবছে বিএনপি থাকবে না, তাদের মুখে ছাই দিয়ে বিএনপি টিকে আছে। বিএনপি আজীবন টিকে থাকবে। বিএনপি মানুষের মননে-মগজে টিকে থাকবে।”
পরিবর্তন আনতে পারে ছাত্রসমাজ: গয়েশ্বর
নয়াপল্টনে আরও বক্তব্য রেখেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছাত্ররাই কেবল পরিবর্তন আনতে পারে বলে আশা জাগান তিনি।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব খবর আছে: ওবায়দুল কাদের
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্ররাই পরিবর্তন আনতে পারে। ছাত্র বলতে শুধু জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নয়; সব ছাত্রসমাজ। এদেশে যত পরিবর্তন হয়েছে, তার মূলে ছিল ছাত্ররা।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্ররাজনীতির নামে তারা যা করছে, সেটা ছাত্র সমাজ তথা জাতির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমি আশা করবো, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে বর্তমান ফ্যাসিবাদের পতন ঘটবে।”
এ সময় শিশুরা সুন্দর মাতৃক্রোড়ে, ছাত্ররা সুন্দর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “মা-বাবা তার সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছেন। ফলে একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যাবে, আবাসিক হলে থাকবে, লেখাপড়া-খেলাধুলা করবে, সকল অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করবে, প্রতিরোধ গড়বে। কিন্তু সেই ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে দেওয়া হয় না, গেলে তাদের রক্তাক্ত হতে হয়। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনামলে অর্থাৎ গত ১৫-১৬ বছরে কত যে সম্ভাবনায় জীবন শেষ হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় হাজিরা দিতে যেতে হয়। আগ্রাসী শক্তি ছাত্র-যুবকের কণ্ঠরোধ করছে। ১৭ বছরে অনেক মেধাবী ছাত্রের জীবন ধ্বংস করা হয়েছে। যুবকরা নিজ নিজ স্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে রাজপথে ঘুরছে। আজকে ছাত্রদের যুদ্ধ করে প্রতিষ্ঠানে টিকে থাকতে হচ্ছে। এটি একটি অভিশপ্ত জীবন।”
মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বনই সরকার রাখেনি: রিজভী
নয়াপল্টনে গণ দোয়া অনুষ্ঠানে মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বনই রাখা হয়নি বলে সরকারের সমালোচনায় বিভোর হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহসচিব রুহুল কবির রিজভী। অভিযোগ করেন, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনে যখন নাভিশ্বাস উঠছে। তখন গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে সাবেক পুলিশ ও সেনা প্রধানের সমালোচনা করেছেন দলটির নেতারা। তারা দাবি করেছেন, এই সরকার এমন বহু দুর্নীতিবাজ সৃষ্টি করেছে। জনগণের সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে সম্পদ গড়েছে।
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপকর্ম ঢাকতেই বিদ্যুৎ পানি ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে বলেও দাবি করেন দলটির নেতারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “অনেক দুর্নীতিবাজ সরকার তৈরি করেছেন। কত কত দুর্নীতিবাজ এমন খুঁজলে পাওয়া যাবে, আমি জানি না।”
একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সমাবেশে রিজভী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, “সরকার জনগণের সঙ্গে ব্যাঙ্গ করেছে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবে পানি-ডিজেল-গ্যাস-অকটেন-পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, “সরকার পানি-ডিজেল-গ্যাস-অকটেন-পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে, যাতে জনগণ কষ্ট পায়। জনগণ হচ্ছে সরকারের কাছে পাইলট প্রজেক্ট। তারা মনে করছে, জনগণের রক্ত শোষণ করে করে এমন করবো যাতে বিশ্বের সব স্বৈরাচারদের কাছে দৃষ্টান্ত হয় এই সরকার।”
নয়াপল্টনের গণ দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু আকস্মিক অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ আরও অনেকে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমন শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলীসহ আরও অনেকে।
দোয়া পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা সেলিম রেজা।