‘বিএনপিবিরোধী’ অ্যাকাউন্ট, পেজ সরাল ফেসবুক

বিবিসি

মে ৩১, ২০২৪, ০৮:৪৭ পিএম

‘বিএনপিবিরোধী’ অ্যাকাউন্ট, পেজ সরাল ফেসবুক

ফেসবুক ও মেটা

বাংলাদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের মোট ১৪৮টি অ্যাকাউন্ট ও পেজ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি অ্যাকাউন্ট ও ৯৮টি পেজ আছে।

চলতি বছর প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করেছে সামাজিক মাধ্যমটির মূল প্রতিষ্ঠান মেটা।

ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বিবিসি বাংলা জানায়, ভুয়া পরিচয়ের এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর বিষয়ে মেটা যে অনুসন্ধান করেছে তাতে এগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল ও এর গবেষণা প্রতিষ্ঠান জড়িত ব্যক্তিদের যোগসূত্র পাওয়া যায়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অধ্যাপক ও ফ্যাক্টওয়াচ সম্পাদক ড. সুমন রহমানের সঙ্গে বিবিসির প্রতিবেদক আলাপ হয়। সেখানে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো সামাজিক মাধ্যমকে নিজেদের প্রপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করে থাকে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।”

বিবিসিকে তিনি আরও বলেন, “এটা ফেসবুকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ঘৃণা ছড়ায় বা ক্ষতিকর এমন কিছু থাকলে তা নিয়ে চাপ বাড়ে। আবার অনেক সময় কর্তৃপক্ষের অনুরোধেও এ ধরনের কনটেন্ট বা অ্যাকাউন্ট বা পেজ সরিয়ে ফেলে তারা।”

মেটার প্রতিবেদনে আরও যা বলা হয়েছে
মেটা তার প্রতিবেদনে বলেছে, সমন্বিত অনির্ভরযোগ্য আচরণের জন্য আমরা ফেসবুক থেকে ৫০টি অ্যাকাউন্ট ও ৯৮টি পেজ সরিয়ে ফেলেছি। এই নেটওয়ার্কটি বাংলাদেশেরই এবং তারা বাংলাদেশের স্থানীয় অডিয়েন্সকে টার্গেট করেছিল।

এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর মোট প্রায় ৩৪ লাখ ফলোয়ার ছিল। পাশাপাশি এসব পেজ থেকে প্রায় ৬০ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা হয়েছে।

ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এমন তৎপরতার পেছনে যারা আছে তাদের কয়েকজনকে অনুসন্ধানের আগেই অটোমেটেড সিস্টেমেই চিহ্নিত করে অকার্যকর করা হয়েছে। তারা এই ধরনের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কনটেন্ট পোস্ট করত বা পেজগুলো চালাত।

এর মধ্যে কিছু পেজ কাল্পনিক নতুন পরিচয় নিয়ে ও অন্যগুলো বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর নাম ব্যবহার করত। আবার কিছু পেজ বিএনপির নাম ব্যবহার করত ও বিএনপি বিরোধী কনটেন্ট পোস্ট করত।

এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর নেটওয়ার্ক ইউটিউব, এক্স হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার), টিকটক, টেলিগ্রাম ও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটসহ একাধিক প্ল্যাটফর্মে রয়েছে বলে মেটার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ছবির ক্যাপশন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ক্ষতিকর কনটেন্ট সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে মেটা।

এই নেটওয়ার্ক প্রাথমিকভাবে বাংলায়ই কনটেন্ট পোস্ট করত। তবে নিউজ ও বাংলাদেশের চলতি ঘটনাবলি ইংরেজিতেও প্রকাশ করা হতো।

এসব ঘটনার মধ্যে ছিল নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ও নির্বাচন পূর্ব সহিংসতায় দলটির ভূমিকা, বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দলটির ভূমিকা।

মেটার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমরা অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফল হিসেবে এসব সন্দেহজনক ও অনির্ভরযোগ্য অতিরিক্ত তৎপরতা দেখতে পেয়েছি, যা গত বছর আমরা সরিয়ে দিয়েছি। আমরা সমন্বিত অনির্ভরযোগ্য আচরণের একটি নেটওয়ার্ক উন্মোচন করতে পেরেছি, যা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, যদিও এসবের পেছনে থাকা ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় ও নিজেদের মধ্যকার সমন্বয়ের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে যে যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও অলাভজনক সংস্থার যোগসূত্র আছে।

ড. সুমন রহমান বলেন, “ফেসবুক হয়তো অ্যালগরিদম বা ফ্যাক্ট চেকিং বা আরও অন্য কোনো চ্যানেল ব্যবহার করে ভুয়া পেজ বা অ্যাকাউন্টগুলোর উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।”

বিবিসিকে তিনি বলেন, “এটা তারা ট্র্যাক করতে পারে চাইলে। খুব একটা জটিল বিষয় না। আর ফেসবুকের জন্য এটা নতুন কোনো কার্যক্রমও নয়। বরং ঘৃণার বিস্তার বন্ধ করতে বা ক্ষতিরোধের জন্য অনেক দেশেই এমনটা তারা করে। আর এটিও সত্যি যে সব জায়গাতেই সরকারগুলো সামাজিক মাধ্যমকে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।”

যেভাবে কনটেন্ট অপসারণ করা হয়
বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছর আগস্টে মেটার কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল।

পরে এই নিয়ে বিবিসি বাংলার ই-মেইলের জবাবে মেটা গুজব মোকাবিলা করতে ও ক্ষতিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকসহ মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা জানিয়েছিল।

তখন মেটা বলেছিল, গুজব ঠেকাতে সারা বিশ্বে ৯০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে তারা।

বাংলাদেশে তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে, এর মধ্যে আছে ফ্যাক্টওয়াচ, এএফপি ও বুম বাংলাদেশ।

গুজব ছড়ানো কনটেন্টের পাশাপাশি যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হয়, সেগুলোও মুছে দেওয়া হয় বলে তখন বলেছে মেটা।

আর কোনো বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার পর সেই ঘটনা সংক্রান্ত সঠিক খবর বা পোস্টের লিংক বেশি করে প্রচার করা হয় যেন ব্যবহারকারীরা ওই নির্দিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে পারে।

মেটা জানায়, তাদের প্ল্যাটফর্মের নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অনেকে কনটেন্ট তৈরি করে থাকে, যে বিষয়ে তারা ওয়াকিবহাল।

এ রকম ঘটনা ঠেকাতে তারা নিয়মিত তাদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের উন্নয়ন করছে ও সুশীল সমাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করছে বলে উঠে আসে মেটার বিবৃতিতে।

Link copied!