শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

সেদিন শহীদ হয়েছিলেন ১৩ সাংবাদিক

সাদিয়া হুমায়রা

ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩, ১০:১৩ পিএম

সেদিন শহীদ হয়েছিলেন ১৩ সাংবাদিক

ছবি: পিআইবিতে অবস্থিত শহীদ সাংবাদিক স্মৃতিফলক

বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার প্রয়াসে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর যে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় তাতে শহীদদের তালিকায় রয়েছেন ১৩ জন সাংবাদিক।

শহীদুল্লাহ কায়সার
১৯৫৬ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন শহীদুল্লাহ কায়সার। পরবর্তীতে দৈনিক সংবাদের সহকারী সম্পাদক এবং যুগ্ম-সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পাকসেনা ও আলবদর বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। আর ফিরে আসা হয়নি তাঁর।

সিরাজুদ্দীন হোসেন
১৯৪৭ সালে ছাত্রাবস্থায় দৈনিক আজাদে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৭১ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী ও বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাক সেনা ও আলবদর বাহিনী তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ফিরে আসেননি তিনিও।

সৈয়দ নাজমুল হক
পাকিস্তান প্রেস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান প্রতিবেদক, কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং সার্ভিস ও হংকং-এর এশিয়া নিউজ এজেন্সির ঢাকা সংবাদদাতা এবং ঢাকা টাইসের সিটি এডিটর ছিলেন। নাজমুল হককেও ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী তুলে নিয়ে যায়।

এ কে এম শহীদুল্লাহ
শহীদ সাবের নামে পরিচিত এ কে এম শহীদুল্লাহ ১৯৪০ সালে ছন্দশিলা নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু করেন। পরে ১৯৬৬ সালে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩১ মার্চ রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী দৈনিক সংবাদ অফিস আগুন দিলে মারা যান তিনি।

এস এ মান্নান
কলকাতার দৈনিক আজাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করা এস এ মান্নান ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দৈনিক আজাদের ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে পাকিস্তান অবজারভারে ক্রীড়া সম্পাদকেরও দায়িত্বে পেয়েছিলেন তিনি। প্রকাশক ছিলেন খেলার খবর নামে একটি ক্রীড়া সাপ্তাহিকের। বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজাকার বাহিনী তাঁকে ঢাকার পল্টনের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি তিনি।

খোন্দকার আবু তালেব
দৈনিক আজাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন আবু তালেব। এছাড়া প্রভাবশালী পত্রিকা দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক ইত্তেফাকেও কাজ করেছেন তিনি। দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক পয়গাম, দৈনিক ইনসাফ, পাকিস্তান অবজারভার, মর্নিং নিউজ ও দৈনিক ইত্তেহাদ ও রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রেও কাজ করেছেন এই শহীদ সাংবাদিক। তিনি ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন।

মুহম্মদ আখতার
দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা শুরু করেন মুহম্মদ আখতার। পরে রেডিও পাকিস্তানের পাক্ষিক ‘এলান’ এ যোগ দেন। এছাড়া পাক্ষিক ‘ললনা’ ও মাসিক ‘সমীপেষু’-তে কাজ করেছেন এই সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী তাঁকে পুরানা পল্টনের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। বিজয়ের দুদিন পর ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় তাঁর বিকৃত মৃতদেহ।

আবুল বাশার
১৯৬৮ সালে মর্নিং নিউজে কাজ করার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি হয় আবুল বাশারের। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে ঢাকায় কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন তিনি। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে ঢাকার মগবাজারের একটি বাসা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে আহত অবস্থায় ধরে নিয়ে যায়। এরপর আর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

নিজামুদ্দীন আহমেদ
১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি গেজেট পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন নিজামুদ্দীন। জীবদ্দশায় দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক আজাদ, ঢাকা টাইমস, পাকিস্তান অবজারভার ছাড়াও বার্তা সংস্থা এপিপি, ইউপিআই, পিপিআই, রয়টার, এএফপি ও বিবিসিতে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বাসা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও আলবদর বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে যায়।

আ ন ম গোলাম মোস্তফা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৩ সালে দৈনিক সংবাদে সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করা গোলাম মোস্তফা ১৯৬৬ সালে দৈনিক আজাদে সাহিত্য সম্পাদক পদে যোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি মাসিক মোহাম্মদীও সম্পাদনা করতেন। ১৯৬৯ সালে তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক ও সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী ঢাকার গোপীবাগের বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেলে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর।

সেলিনা পারভীন
মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেওয়া শহীদ সেলিনা পারভীন ‘ললনা’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে নিজের সম্পাদনায় সাহিত্য পত্রিকা ‘শিলালিপি’ প্রকাশ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় স্বাধীনতা বিরোধীরা। বিজয়ের অব্যবহিত পর ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে মৃতদেহ পাওয়া যায় তাঁর।

চিশতী শাহ হেলালুর রহমান
১৯৭১ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন হেলালুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে পাকিস্তানি বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মারা যান তিনি।

শিবসাধন চক্রবর্তী
১৯৬৯ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন শিবসাধন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ রাতে রমনার কালীমন্দির এলাকায় ঘুমন্ত মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চালানো নৃশংসতায় মারা যান তিনি।

Link copied!