ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩, ১০:০৩ এএম
‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।’
ছোটবেলায় বাংলা পাঠ্য বইয়ে অনেকেই এই লাইনগুলো পড়েছি। ‘নোলক’ শিরোনামের এই কবিতাটির লেখকের নাম মনে আছে তো? তিনি হলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ।
১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার মোড়াইল গ্রামে জন্ম নেয়া এই কবির প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।তাঁর পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর। হবিগঞ্জ জেলার বিখ্যাত জমিদার আব্দুল ওহাব মোল্লার নাতি তিনি।
আল মাহমুদ একাধারে কবি, কথা সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্প লেখক, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়াংশে সক্রিয় থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাকভঙ্গিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।
সংবাদপত্রে লেখালেখির এক পর্যায়ে ১৯৫৪ সালে আল মাহমুদ ঢাকায় আসেন। কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লিখতে থাকেন। পাশাপাশি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি নেন। পরে ১৯৫৫ সালে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের পর দৈনিক গণকণ্ঠ প্রকাশিত হয় তাঁরই সম্পাদনায়। এ সময় এক বছরের জন্য কারাবন্দি থাকতে হয় তাঁকে।
আল মাহমুদের প্রথম বই 'লোক লোকান্তর' প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। দ্বিতীয় বই 'কালের কলস' প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। এ দুটি কবিতার বইয়ের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর গল্প লেখায় মনোযোগী হন আল মাহমুদ। ১৯৭৫ সালে তাঁর প্রথম ছোটগল্পের বই 'পানকৌড়ির রক্ত' প্রকাশিত হয়।
পরে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহপরিচালক পদে নিয়োগ দেন। পরে তিনি পরিচালক হন। ১৯৯৩ সালে তিনি অবসর নেন।
সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ এবং কলকাতার ‘নতুন সাহিত্য’, ‘চতুষ্কোণ’, ‘ময়ূখ’, ‘কৃত্তিবাস’ ও ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা ও কলকাতার পাঠকদের কাছে তাঁর নাম সুপরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘কবি ও কোলাহল’।
আল মাহমুদের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না’, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’, ‘কাবিলের বোন’, ‘উপমহাদেশ’, ‘ডাহুকি’, ‘আগুনের মেয়ে’, ‘চতুরঙ্গ’ ইত্যাদি। ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’ তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থ। ছড়া রচনাতেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ- সবকিছুই ছড়ায় ছড়ায় শিখিয়ে যাচ্ছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
আল মাহমুদ তার কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জয় বাংলা পুরস্কার, হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার, কাজী মোতাহার হোসেন সাহিত্য পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদকসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এই কবির মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন তিনি। তাঁর মৃত্যু দিবসে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ জানাচ্ছে শ্রদ্ধা।