কঠিন চরিত্র সহজেই মানিয়ে নিতেন আহমেদ রুবেল

গোলাম রাব্বানী

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪, ০১:৫৯ পিএম

কঠিন চরিত্র সহজেই মানিয়ে নিতেন আহমেদ রুবেল

দেশের অনেক অভিনয়শিল্পীর ভিড়েও কথা একটাই ‘আহমেদ রুবেল’ একজনই।

ফেলুদা থেকে সত্যজিৎ রায় কিংবা প্রেত নাটকের কালো জাদুকর রুমি। এই চরিত্রগুলোর জন্য যদি একজন যোগ্য অভিনেতা খুঁজতে হয় তাহলে কষ্টটা কমই হয়েছে পরিচালকদের। কেননা বাংলাদেশের ছিল আহমেদ রুবেল নামে একজন অভিনেতা। যে কিনা যে কোন এই ধরনের কঠিন চরিত্রগুলো সাবলীলভাবেই তুলে ধরতো। নিজস্ব অভিনয়ে ধাঁচের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় দিক তাঁর ভরাট কণ্ঠ। ডায়লগ ডেলিভারির সময় কবিতা আবৃত্তির মতো বলিষ্ঠ লাগে। তাঁর অভিনয় যারা পছন্দ করে এই কণ্ঠের জন্যই বেশিরভাগ করে থাকে।

ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চে হাতেখড়ি অভিনয়ে। তবে টিভি নাটকের অভিনেতা হিসেবেই মনে রাখবে সবাই তাঁকে। আর প্রথম টিভি নাটকে কাজ করেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নযাত্রা’-তে।’ টিভি নাটকে তাঁর একটা শক্ত অবস্থান ছিল।

হুমায়ূন আহমেদ ও মুহাম্মদ জাফর ইকবাল দুই ভাই-ই আহমেদ রুবেলের ক্যারিয়ারের জন্য বড় একটা ভূমিকা রেখেছিল। হুমায়ূন আহমেদের ‘পোকা’ নাটকের ‘ঘোড়া মজিদ’ চরিত্রটি তাকে রাতারাতি জনপ্রিয়তা দেয়।

এরপর মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ভৌতিক থ্রিলার উপন্যাস ‘প্রেত’-এর রুমি চরিত্রটি একুশে টিভিতে প্রচারের পর তাঁর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা তৈরি হয়। নাটকের অঙ্গনে আলাদা একটা জনরাই যেন তৈরি করেছিল আহমেদ রুবেল। হরর ও সাইকোলজিক্যাল বিষয় নিয়ে দেশে খুব একটা কাজ না হলেও হাতে গোনা যে কয়টি হয়েছে সেখানে ভরসার নাম ছিল আহমেদ রুবেল। 

স্বপ্নযাত্রা, খোয়াবনগর, বৃক্ষমানব, বলবান জামাতা, মায়েশা, লি, শত্রু, অতিথি, দ্বন্দ্ব সমাসসহ রয়েছে অজস্র নাটক। 

তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় ওয়েব সিরিজ ‘ফেলুদা’-তে যেন সকলকেই ছাড়িয়ে গেছে। ফেলুদা চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তীর পর হয়তো আহমেদ রুবেলকেই পছন্দ করবে দর্শকরা।

তবে তাঁর অপ্রকাশিত ‘ডিয়ার সত্যজিৎ’ সিনেমার ট্রেইলারেই যেন বাজিমাত করে গিয়েছে। প্রথম দেখায় হয়তো অনেকেই ভাববে সত্যজিতের রঙিন কোনো ভিডিও। ঠিক এতটাই নিঁখুত ছিল তাঁর কণ্ঠ, অভিনয়।

ঢালিউডের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয় খলনায়ক হিসেবে। ১৯৯৪ সালে ‘আখেরি হামলা’ ছবির মাধ্যমে। এরপর টানা ১২/১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘কে অপরাধী, আজকের ফয়সালা, রঙিন রংবাজ, মুক্তির সংগ্রাম, সাবাশ বাঙ্গালী’ ইত্যাদি।

বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি অফট্র্যাকেও তাঁর জুড়ি ছিল না। যেমন- ‘মেঘলা আকাশ, ব্যাচেলর, চন্দ্রকথা, দ্য লাস্ট ঠাকুর, গেরিলা, জোনাকির আলো, পারাপার, পৌষ মাসের পিরিতি।’ ‘চন্দ্রকথা’ ছবিতে আমিন চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সমালোচক শাখায় ২০০৪ সালে মেরিল প্রথম আলো-তে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিল। 

অনেক অভিনেতার মধ্যেও নিজের ব্যক্তিত্ব, অভিনয়ক্ষমতায় বিপুল দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়া একজন অভিনেতা তিনি। তাকে একবাক্যে পছন্দ করা দর্শকের সংখ্যাই বেশি। তাই দেশের অনেক অভিনয়শিল্পীর ভিড়েও তাঁর ক্ষেত্রে কথা একটাই ‘আহমেদ রুবেল’ একজনই।

Link copied!