‘এই স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম?’, ‘১৫ আগস্ট ও স্বাধীনতা’ নিয়ে ফেসবুকে ফারুকীর প্রশ্ন

শোবিজ ডেস্ক

আগস্ট ১৬, ২০২৪, ১১:১৯ এএম

‘এই স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম?’, ‘১৫ আগস্ট ও স্বাধীনতা’ নিয়ে ফেসবুকে ফারুকীর প্রশ্ন

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলনে একেবারে প্রথম দিক থেকে সরব ছিলেন নির্মাতা ও পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়া এবং সবশেষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার- সব বিষয় নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলতে দেখা গেছে গুণী এই নির্মাতাকে। এবারে ১৫ আগস্ট ও স্বাধীনতা দিবস  নিয়েও বললেন।

১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। কিন্তু তাদের সেই কর্মসূচি ঠেকাতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন সংলগ্ন সড়ক ও আশপাশের এলাকা দখল করে রাখে। এমনকি হাতাহাতি পর্যন্তও ঘটেছে। বিষয়টি শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সকালে এক ফেসবুক পোস্টে অন্য অনেকের মতো মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও সমালোচনা করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, “এই স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম?”

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন: ‘৭১’এ বিজয়ের পরবর্তী কয়েক মাস এমন কি বছর পর্যন্ত এই একই প্রশ্ন নিশ্চয়ই অনেকেই করেছিলেন। মুক্তিযদ্ধের পর একটা ভেঙে পড়া রাষ্ট্রের নানা রকম বিশৃঙ্খলা দেখে এই প্রশ্ন করার মানুষের অভাব ছিল না। আমি তো মনে করতে পারি মধ্য আশি পর্যন্ত এই কথা হরহামেশাই মানুষ বলতো। ‘২৪’র বিজয়ের একদিন না যেতেই এই প্রশ্ন কেউ কেউ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ও আজকে দুই প্রেক্ষিতেই এর উত্তর- সবকিছুর পরও স্বাধীনতাই শ্রেয়। স্বাধীনতার চেয়ে শ্রেয় কেবল অধিকতর স্বাধীনতা।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঘটনা উল্লেখ করে পোস্টে ফারুকী লেখেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) অনেক কিছুই হয়েছে যা নিন্দনীয়। আশার কথা এই যে, ছাত্র নেতারা এর মধ্যেই সেটা স্বীকার করে এর পুনরাবৃত্তি না করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্যাসিবাদ ঠেকাতে গিয়ে ফ্যাসিবাদের টেম্পলেট ইউজ করা যাবে না। কিন্তু আমাদেরকে সময়টাও বুঝতে হবে। এক চরম অস্থির সময় যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদ হঠাও আন্দোলনে অনেক মত-পথের মানুষ ছিল। তাদের মত-পথ-বিশ্বাস যে এক তা না। বিজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মত পথের অ্যাকটিভিস্ট ভাবছেন এটা একান্তই তার বিজয়। তাই তিনি যেভাবে চান সেভাবেই দেশটা সাজানো হোক। ফলে বিজয়ীদের দিক থেকে কিছু উসকানি আছে। কেউ কেউ চায়, দেশে বঙ্গবন্ধুর নিশানা থাকতে পারবে না। যদিও এই চরম চিন্তা আমাদের আগানোর জন্য ক্ষতিকর বলে আমি মনে করি। এই নিয়ে আগেও লিখেছি। এগুলো কোনও কাজে তো আসেই না, বরং জাতি হিসাবে আমাদের দুর্বল করে। বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল নিয়ে হাজারো প্রশ্ন ও সমালোচনা থাকতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হিসেবে তাকে মুছে দেয়া যাবে? কিছু কিছু চেষ্টা ফল দেয় না। যেরকম আওয়ামী লীগ প্রাণপণে চেয়েছে বিএনপিকে মুছে দিতে, জিয়াউর রহমানকে রাজাকার বানাতে। পেরেছে?

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়া ও ভারতে অবস্থান প্রসঙ্গে এই নির্মাতা বলেন, ওইদিকে উসকানি আছে শেখ হাসিনার দিক থেকেও। রক্তের দাগ এখনও শুকায় নাই। গুম হওয়া মানুষদের কান্নার রোল এখনও থামেনি। ১৭ বছরের লুটপাট আর নৈরাজ্যের বিচার এখনো হয় নাই। দেশ ছাড়ার আগেও যিনি আরও মানুষ খুনের জন্য সেনাপ্রধানকে চাপ দিচ্ছিলেন, দেশ ছেড়েও জুডিশিয়াল ক্যু করতে চাইলেন, তিনি যখন ডাক দিলেন রাজপথে নামার তখন স্বাভাবিক কারণেই এটা ছাত্র জনতার মধ্যে ভিন্ন বার্তা দিলো। তাদের কাছে মনে হলো শোককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদ ফেরার চেষ্টা করছে। ফলে সব ছাত্র সংগঠন রাস্তায় নেমে আসলো। তারপরের কথাতো শুরুতেই বললাম।

দেশের সব মানুষকে আহ্বান করে এই নির্মাতা বলেন, সবার প্রতি তাই আহ্বান, ধৈর্য এবং এমপ্যাথি দেখান দয়া করে। মব-রাজ প্রতিষ্ঠা করবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারকে গোছাতে সময় দিন। সরকারকে নিয়ন্ত্রণ নিতে দিন সবকিছুর উপর। বহু বছরের ফ্যাসিজমের কালে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী যে সব অপরাধ হয়েছে, লুটপাট হয়েছে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আজকের যে নৈরাজ্যকর অবস্থায় দেশকে আনা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যেসব অপরাধ হয়েছে সেগুলোর ন্যায্য বিচার আয়োজনে সহায়তা করেন। কিন্তু শৃঙ্খলাও বজায় রাখেন। আওয়ামী লীগের প্রতি আহবান, নিজেদের প্রশ্ন করেন। কিভাবে আপনারা এখানে এসে পৌঁছালেন, ভাবেন। হুমকি ধমকি পরিহার করে আত্মোপলব্ধির দিকে যান। ধন্যবাদ। আই অ্যাম অফ টু ডিজিটাল ডিটক্স। সত্যি সত্যি। এডিটিং শেষ করতে হবে।

Link copied!