খালেদা জিয়ার চিকিৎসাই বিএনপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: মির্জা ফখরুল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৬, ২০২১, ০৫:৪৭ এএম

খালেদা জিয়ার চিকিৎসাই বিএনপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: মির্জা ফখরুল

নির্বাচনী বিপর্যয় ভুলে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে দল গোছাতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। রাজনীতির প্রাণ ঢাকাকে আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ধরে সক্রিয় করা হচ্ছিলো দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে। উদ্দেশ্য, বছর শেষ হওয়ার আগেই আন্দোলনমুখী নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন গোছানো। এরপর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে রাজপথে নামার পরিকল্পনা নিয়ে ছিলো বিএনপি। কিন্তু রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়ায় সকল সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি তার চিকিৎসার বিষয়টিও অত্যান্ত গুরুত্বের সহিত দেখা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও দল গোছানোর বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, বিএনপি গণতন্ত্রহী প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও তাদের সংগঠকে গোছাচ্ছে। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এবং তার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা এখন সবচেয়ে প্রাধান্য লাভ করেছে। সে জন্যই দলের নেতাকর্মীরা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে, কর্মসুসূচি দিচ্ছে।

বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন সেটা জানতে চাইলে মহাসচিব বলেন, অনেক জটিল অবস্থায় আছেন, কোনরকমে বেঁচে আছেন।

বেশ কিছুদিন ধরে নানান অসুখে ভুগলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন ক্রিটিকাল বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন আরো জটিল হচ্ছে। পুরনো অসুখের সঙ্গে একাধিক নতুন ও জটিল উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার রক্তে হিমোগ্লোবিন দ্রুত কমে যাচ্ছে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়তে দেয়া হচ্ছে রক্ত। এরইমধ্যে তার লিভার থেকে ফ্লুইড নিয়ে পরীক্ষা করতে দেয়া হয়েছে। লিভার জটিলতার কারণে তিনি রক্তবমি করেছেন। শরীরে খনিজ অসমতা চরম আকার ধারণ করেছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দেয়া হচ্ছে ইনস্যুলিন। অক্সিজেনের লেভেল ওঠানামা করায় লাগছে অক্সিজেন সাপোর্ট।

এ বিষয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, তাদের নেত্রী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আর যে রোগটি হয়েছে, তার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।

চলমান পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম কতদূর জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শারুল আলম খান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণভাবে বেগম জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার  বিষয়টি দেখছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় এবং জাতীয় রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তাই বেশ কিছুদিন থেকেই দল গোছানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই চলতি বছরের মধ্যে মূল দল এবং কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলটি। পাশাপাশি নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দলীয় ঐক্যের দিকে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনে পরাজয় এবং আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী না থাকাকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন দলটির নীতি নির্ধারণী নেতারা। বিশেষ করে যুগের পর যুগ একই নেতৃত্বের অধীনে সংগঠন পরিচালনা এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরি না হওয়াকেও দায়ী করা হয়।

দেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, কোনও নির্বাচনে একটি আসনেও যিনি কখনও পরাজিত হননি, দেশের সর্ববৃহৎ এবং জনপ্রিয়তম দল বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা। 

জ্বর আসায় গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২৫ অক্টোবর তার অস্ত্রোপচার করা হয়। এর আগে করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে টানা ৫৪ দিন একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।

 

 

Link copied!