জঙ্গিবাদ: এক জটিল বাস্তবতা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২০, ২০২১, ০৫:০৬ এএম

জঙ্গিবাদ: এক জটিল বাস্তবতা

সারাবিশ্বে জঙ্গিবাদ আলোচিত এক বিষয় মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ গঠনে জঙ্গিবাদ প্রধান অন্তরায় আফগানিস্তানে কট্টর মৌলবাদী তালেবান ক্ষমতায় আসায় বিষয়টি এতদঞ্চলে তো বটেই, গোটা বিশ্বকেই অস্বস্তিতে ফেলেছে। নতুন করে আবার জঙ্গিবাদ ইস্যুটি আলোচিত হচ্ছে।

শুধু ইসলামী মৌলবাদ নয়, সমানভাবে হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদী মৌলবাদও সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক বিশ্লেষক দীপিকা ঘোষের মতে 'জঙ্গিবাদ বা টেরোরিজম বর্তমান বিশ্বের এক জটিল বাস্তবতা তাই এখন যৌক্তিক কারণেই জগতের অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ নিয়ে ব্যাপক বিশ্লেষণ গুরুত্ব পাচ্ছে এর সূত্র ধরে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গিবাদের নানা শ্রেণিবিভাগও তৈরি হয়েছে যেমন সাইবার, নারকো, নিউক্লিয়ার, বায়ো, রাজনৈতিক, সেপারেটিস্ট, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ইত্যাদি' সাম্প্রতিক বিশ্বে অন্যান্য ধর্মীয় মৌলবাদের তুলনায় মুসলিম মৌলবাদ নিয়ে অধিকতর আলোচনা চলছে আলোচনার প্রধান কারণ ইসলামী জঙ্গিবাদ পুরোবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া জঙ্গিবাদের এই বিস্তার একদিনে হয়নি বিশেষত আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই দেখতে পাই পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জঙ্গিবাদকে আত্মিকরণ করা হয়েছে ধর্মীয় উগ্র রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষদের রাষ্ট্র সমাজে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে উচ্চাসনে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী এই চক্রের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন দেশীয় ইসলামী জঙ্গিবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে নতুন মাত্রায় খোদ পাকিস্তান আমলে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর এই নবযাত্রা দলটিকে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বনে সিদ্ধহস্ত করে তুলেছে সর্বশেষ ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের উত্থানের পর আপাতঃ এদের কার্যক্রম কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে মনে করলেও কিন্তু তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয় অতীতে লেখক হুমায়ূন আজাদকে আক্রমণ থেকে ব্লগার হত্যাসহ যেসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস আমরা দেখেছি তা জামায়াতী পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদের নতুন মোড়কের তান্ডব বলেই জ্ঞাতার্থ হলি আর্টিজেনে মাদ্রাসা ব্যতিরেক সেক্যুলার কারিকুলামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর চিত্র আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায় শুধু মাদ্রাসায় পড়লেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে সেই বিশ্বাসে কিছুটা ফাটল ধরে এই ফাটল পুরোনে যোগ হয় স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু মাদ্রাসাই নয় দেশের যে কোনো ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করেই জঙ্গি হয়ে ওঠা যায় যে কারণে আমরা বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জঙ্গিভাবাপন্ন ছাত্র ‘উৎপাদন’ হতে দেখি

জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হওয়ার পিছনে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন দায় এড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি সমাজও কোনোভাবে দায়মুক্ত নয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কলামিস্ট আবুসালেহ সেকেন্দারের মতে 'শিক্ষা মানুষকে প্রগতিশীল, মানবিক, সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীদের উগ্রপন্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়াই প্রমাণ করছে, আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সেই পথে হাঁটছে না বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে জঙ্গিবাদকে লালন করছে অজপাঁড়া গায়ের একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মতো তারাও ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীদের (!) হত্যাকেই ধর্ম বলে মানছে শহরের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের চিন্তা চেতনা আর অজঁপাড়াগায়ের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর চিন্তাচেতনার মধ্যে পার্থক্য না থাকায়ই প্রমাণ করছে যে, এদেশের বর্তমান প্রচলিত উভয় ধারার (মাদ্রাসা সাধারণ) শিক্ষা প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী, সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমস্ক মানুষ গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে' এই ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়েই বিজ্ঞানমনস্ক প্রগতিশীল প্রজন্ম তৈরিতে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ যেভাবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে, তা দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গল বয়ে আনেনি বরং রাজনৈতিক হাঙ্গামা, স্বৈরাচারী শাসন, রাজনীতি ধর্মের লেজুড়বৃত্তি বাংলাদেশকে জঙ্গি উৎপাদনে উর্বর ভূমি করে তুলেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই স্বাধীন দেশের শিক্ষানীতিতে এক মুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কথা থাকলেও তা গড়ে ওঠেনি বরং বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসারে আমাদের নতুন প্রজন্ম একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক শিক্ষায় বড় হয়েছে ধর্মাচ্ছাদিত যুগনুপযোগী ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা, ত্রুটিপূর্ণ সেক্যুলার কারিকুলাম ধর্মীয় মৌলবাদী শিক্ষা ক্ষেত্রকেই পরোক্ষ প্রতোক্ষভাবে প্রসারিত করেছে আমাদের সমাজের উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবর্গের মানুষ উভয়ই জঙ্গিবাদী শিক্ষা বিস্তারে পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছে দিনের পর দিন সেই সঙ্গে জঙ্গিবাদে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও যে অধিকতর, তা অমূলক কোনো দাবি নয়

নানা সময়ে ভোটের রাজনীতিতে রাজনৈতিক দল সরকারগুলো ইসলামী মৌলবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়ে ওঠে যার জন্য দিনকে দিন ধর্মীয় উগ্রবাদী রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনগুলো আরো সংগঠিত হয়েছে বিস্তার লাভ করেছে শাখা-প্রশাখায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, মুজাহিদ কমিটি, ফরায়েজি জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফতে ইসলামী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, গণসেবা আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামীক পার্টি, গণতান্ত্রিক ইসলামী ঐক্যজোট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, জমিয়তুস শাবাব,জমিয়তে হিজবুল্লাহ, ইসলাহুল মুসলিমীন, খাদেমুল ইসলাম জামায়াত, নেদায়ে ইসলাম, আঞ্জুমানে আল ইসলাম, আহলে হাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ, উলামা মাশায়েখ পরিষদ, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, ইমাম-ওলামা সমন্বয় ঐক্যপরিষদ, দাওয়াতে ইসলাম, ফেৎনা প্রতিরোধ কমিটি, বাতিল প্রতিরোধ কমিটি, ইসলামবিরোধী তৎপরতা প্রতিরোধ কমিটি, অনৈসলামীক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি, আন্তর্জাতিক মজলিসে মাহফিজে খতমে নবুওয়্যত, ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত মুভমেন্ট, খতমে নবুওয়্যত কমিটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মজলিসে তাহাফফুজে, খতমে নবুওয়্যত আন্দোলনসহ নানা রকম পকেট সংগঠন প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে পরোক্ষ প্রতোক্ষ এসব প্রচারণা দুর্গম গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহুরে উচ্চবিত্ত পরিবারের ডাইনিংয়ে পৌঁছে গিয়েছে

আমরা যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলগুলোর দিকে খেয়াল করি, তাহলে দেখতে পাব উর্মীয় উম্মাদনার মাত্রা কতদূর ছড়িয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধিতা, বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি আখ্যা, শিল্প সাহিত্য নিয়ে অপপ্রচার, একাত্তরের রাজাকারদের পক্ষাবলম্বন, নারী বিদ্বেষ, ভিন্ন মতাবলম্বীদের কটাক্ষ, আক্রমণ এমনকি হত্যায় উৎসাহী করা, তথাকথিত ইসলামী শাসন বাস্তবায়নে জিহাদ করা এইসব ওয়াজ মাহফিলের বিষয়বস্তু সেই সঙ্গে ধর্ম বিজ্ঞানকে সমকক্ষ করার অপপ্রয়াস, ধর্মগ্রন্থকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করতে ভুল উপস্থাপন অপব্যাখ্যা দিয়ে অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে প্রতিনিয়ত বক্তাদের যৌন সুরসুরিমূলক কথাবার্তাও অশ্লীলতার সীমাকে অতিক্রম করেছে যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম বিভ্রান্ত হচ্ছে বিপথগামী পথে পা বাড়াচ্ছে

সমাজের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ধর্মজ্ঞানহীন ধর্মভীরু মানুষদের ভেতরে নতুন প্রজন্ম হয়ে উঠছে ধর্মান্ধ ও উগ্র। জীবনযাপনে ধর্ম বহির্ভুত আধুনিক অবয়বে আমাদের সামনেই বেড়ে উঠছে মৌলবাদী প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে তাদের দৌড়াত্ম সবখানেই সাইবার ক্রাইম, সাইবার বুলিংয়ে জঙ্গিমনস্কতার ছড়াছড়ি ভার্চুয়াল জগতে ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়ানো কন্টেন্ট মিলছে নিমিষেই এখানে কলামিস্ট দীপিকা ঘোষের কথাগুলো স্মরণ করতে পারি, তিনি বলেছেন 'বিজ্ঞান নব্য প্রযুক্তির নিত্য নতুন দিক উন্মোচনের পাশাপাশি জঙ্গিদের জঙ্গিত্ব সৃষ্টির অভিনব সব কৌশলপদ্ধতি বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলেছে অপ্রতিহত প্রতিযোগিতার সুনির্দিষ্ট পথ ধরে রোবোটিক, জেনিটিক, নিওরোসায়েন্স, বায়োটেকনোলজির আবিষ্কার যেমন অব্যাহত অগ্রগতিতে আমূল বদলে দিচ্ছে মানুষের জীবনধারা আর বিচিত্র জীবের পৃথিবীকে, তেমনি আধুনিক প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারে আন্ডারগ্রাউন্ডে সন্ত্রাসীরাও তাদের জঙ্গিবাদে জাগিয়ে তুলছে নতুন সৃষ্টির উন্মাদনা বলাই বাহুল্য, আধুনিক জঙ্গিরা নিত্যনতুন প্রযুক্তির ফসল ব্যবহারে যতখানি সিদ্ধহস্ত, উৎসাহী সফলকাম, সমাজের বুদ্ধিদীপ্ত সাধারণ মানুষ তারচেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে' তাদের জঙ্গিবাদী মতাদর্শ প্রচার প্রসার প্রটেক্ট করতে পাল্টা প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে আমাদের প্রগতিবাদীরা তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে এছাড়া এসব বন্ধ করা জরুরি হলেও তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যেগ আমরা দেখি নাই যে কারণে আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফেসবুক, ইউটিউব ওয়েব সাইটের কমেন্ট বক্সে প্রকাশ্যে ধর্মীয় আক্রমণ, গালিগালাজ, মান হানিকর মন্তব্য ভিন্ন বিশ্বাসীদের কটাক্ষ হুমকি প্রদান করতে দেখতে পাই এদের আইনের আওতায় এনে শুধু শাস্তি নয় সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করাও আবশ্যক প্রগতির চর্চা প্রচার প্রসারে রাষ্ট্রীয় সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি করা সময়ের তাগিদ

ইতোমধ্যে হিপোক্রেট বাঙালি সমাজের মুসলিম মানসের রূপরেখা মডারেট হতে হতে গিরগিটি রঙ নিয়েছে মুহুর্তেই রূপ বা রং পাল্টানো এইসব মানুষ সমাজের জন্য যে কোনো মুহূর্তে ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে সেই ভয়াবহতার আলামত আমরা রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তান্ডব থেকে আচ করতে পারি যে কোনো তুচ্ছ বা ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে পর্যবসিত করার নানা খবর বিচ্ছিন্নভাবে আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি কিন্তু এর সিংহভাগটাই এখনো আড়ালে রয়ে গেছে মসজিদে না যাওয়া, নামাজ না পড়া, রোজা না রাখা নিয়েও গ্রামে গ্রামে ধর্ম পুলিশিং ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে যাচ্ছে প্রতিদিন একজনের ধর্ম মানার সঙ্গে সঙ্গে অন্য একজনের ধর্ম না মানার অধীকার সমাজে এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি যার জন্য মানবিক সমাজ গঠনে বাংলাদেশ অনেকাংশে পিছিয়ে

রাষ্ট্র তার অবকাঠামোগত উন্নয়নে নজর দিলেও সামাজিক উন্নয়ন সেই মাত্রায় অবহেলিত সামাজিক উন্নয়ন ব্যতিত শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন একটি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পারে না, সেই কথা ভুলে গেছে আমাদের সরকার নীতি নির্ধারকগণ বিধায় আমাদের প্রজন্ম একটি উগ্রবাদী সমাজ সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে খুব সহজেই শুধু মাত্র ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদী গোষ্ঠী নিজেদেরকে লাভবান করছে আর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের পুরো সমাজ, রাষ্ট্র শান্তিপ্রিয় সহজ সরল মানুষেরা নানা সময়ে জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তাই সাধারণ জনগণকেই আগে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, হত্যার শিকার হতে হয়েছে জনসাধারণকে এজন্য আমাদের প্রগতিবাদী ন্যায় বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সামাজিক সাংস্কৃতিক লড়াইকে সুসংহত সুসংগঠিত করা জরুরি এই লড়াই সমাজ থেকেই শুরু করতে হবে অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা যে গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র মিলিয়ে সোস্যাল ডেমোক্রেসির বাংলাদেশ চেয়েছিলাম তা শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে

আমরা চাই না বারবার রামু, নাসিরনগর, হলি আর্টিজেন, শাল্লা বা অতি সাম্প্রতিক খুলনায় ঘটে যাওয়া রূপসার মতো কোনো সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস। চাই না অভিজিৎ, দীপন ওয়াশিকুরসহ আরো অনেক মেধাবী মুখ জঙ্গিবাদের তরবারিতে আঘাতপ্রাপ্ত হোক, খুন হোক। চাই না লালমনিরহাটের মতো মানুষ পুড়িয়ে মারার কোনো আরবীয় অন্ধকার যুগের সংস্কৃতির পুনরুত্থান।

লেখক: কবি। সম্পাদক, ককপিট।

www.mirrabi.com

 

Link copied!