ঢাকার শাহজাহানপুরে রাস্তায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় গত বৃহস্পতিবার। ওই হত্যাকাণ্ডের দুই দিনের মাথায় শনিবার পাশের সবুজবাগ এলাকায় ঘরে ঢুকে এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত গৃহবধূর নাম তানিয়া আক্তার (২৬)। তাঁর স্বামী মাইনুল হোসেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট। মাইনুল চাকরিসূত্রে ফরিদপুরে থাকেন। দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে সবুজবাগের বাসায় থাকতেন তানিয়া।
তানিয়ার তিন বছর বয়সী মেয়ে ও ১০ মাসের ছেলেকে রক্তমাখা অবস্থায় এদিন উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাহানপুরে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু (৪৫) ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি (১৮)। ওই ঘটনায় টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন।
এরইমধ্যে আজ রবিবার ভোরে নির্মমভাবে খুন হন দন্তচিকিৎস আহমেদ মাহী বুলবুল। এদিন ভোরে শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে বের হন ডা. বুলবুল। তিনি তার সহকারীকেও ফোন করেছিলেন, তবে তার সহকারী তখনও পৌঁছাননি। বাসার সামনেই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন তিনি। দুবৃত্তরা তার পকেটে থাকা টাকাপয়সা নেয়নি। শুধু তার একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।
রাজধানীতে হঠাৎ বেড়েছে খুনোখুনি। খোদ পুলিশ প্রশাসনই বলছে এ কথা। অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মুহূর্তেই কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। এসব ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
নিহত ডা. বুলবুলের ঘনিষ্টজনরা বলছেন, মগবাজারের ‘রংপুর ডেন্টাল’ নামের একটি চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখতেন বুলবুল। গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কারণে প্রশংসিত ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি কিছু ব্যবসার কাজেও মনোযোগ দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে নোয়াখালীতে কিছু কনস্ট্রাকশনের কাজ পেয়েছিলেন। সেই কাজের মুল্যমান ১৮-২০ কোটি টাকার মত। রহস্যময় এই খুন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করছেন ডা. বুলবুলের পরিচিতজনরা।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু (৪৫) শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার থেকে বাজার করে মাইক্রোবাসে বাসায় ফিরছিলেন। গাড়িটি শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেটপরা এক সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে টিপু (৪৫) ও রিকশা আরোহী সামিয়া আফরিন প্রীতি (১৮) নিহত হন। প্রীতি পুরান ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ডিবি পুলিশ দাবি করেছে, তারা আকাশ নামের সেই অস্ত্রধারীকে ধরতে সক্ষম হয়েছে।
গৃহবধু তানিয়া হত্যকাণ্ড সম্পর্কে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরাদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ পর তিন বছর বয়সী মেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পাশের ফ্ল্যাটে দরজায় নক করে। সেখান থেকে লোকজন বের হয়ে পুলিশে খবর দেয়। আর দশ মাস বয়সী ছেলে সন্তানের অবস্থা দেখে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় বাধা দিলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় তার তিন বছর বয়সী মেয়ে শিশুকে এবং ১০ মাস বয়সী সন্তানকে স্কচটেপ দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে রাখা হয়। হত্যাকারী পালিয়ে যাওয়ার সময় রান্নাঘরের গ্যাসের চুলার গ্যাস অন করে যায়, যাতে করে ঘরে আগুন লেগে যায়।
এসি মেরামতের কথা বলে খুনিরা বাসায় ঢুকেছিলেন বলে ধারণা পুলিশের।
ঢাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি টার্গেট কিলিংও বেড়েছে। পুলিশ সূত্র ও বিভিন্ন হাসাপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেই এসব ঘটনায় রাজাধানীতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। তা ছাড়া এসব চুরি ছিনতাইয়ের কবলে পড়েও দুইমাসে আহত হয়েছেন ৫০ এর অধিক মানুষ।
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পুলিশকে খুন, চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, এসব পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা কখনো সম্ভর নয়।