বাংলাদেশের স্বাধীনতা পেক্ষাপটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের তাৎপর্য অনেক গভীর বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
শনিবার দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রথমবারের মতো 'ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ' জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জাতীয়ভাবে দিবসটি উদযাপনের যাবতীয় পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর থেকে দিবসটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হবে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ঐতিহাসিক ভাষণ কে 'বৈশ্বিক দলিল' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ ভাষণের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’
দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেন সমার্থক শব্দ। শব্দ দুটি অভিন্ন সত্ত্বাও। ৭ মার্চের ভাষণ কোনো সাধারণ জনসভার ভাষণ ছিল না। এটি ছিল স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালি জাতির উদ্দেশ্যে জাতীয় মুক্তি তথা স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধুর লড়াইয়ের চূড়ান্ত আহ্বান। এই ভাষণে ছিল আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতির পূর্ণ দিকনির্দেশনা। এ ভাষণ প্রকৃত অর্থেই ছিল বাঙালির স্বাধীনতার ঘোষণা। বাঙালির জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে হাজার বছর ধরে লালিত আশা-আকাঙ্ক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বপ্ন ও স্বপ্ন ও স্বপ্ন রুপায়ণের এক মহাকাব্য এ ভাষণ।'
৭ই মার্চ জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের লক্ষ্যে ঢাকাসহ সব জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে রয়েছে ৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো করা হবে।
এ দিবস উদযাপনের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৭ মার্চ বিকেল ৩ টায় আয়োজন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম.মোজাম্মেল হক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানস্থলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০০ অতিথির উপস্থিতিতে 'ঐতিহাসিক ৭ মার্চ' এর ভাষণ অনলাইনে প্রচার করা হবে এবং ডকুড্রামাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়া সারাদেশে নবীন-প্রবীণ শিল্পী,রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিশু-কিশোরসহ দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পীদের নিয়ে আবৃত্তি অনুষ্ঠান আয়োজন, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী, নিত্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন নিয়ে নাটক মঞ্চায়ন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে সব জেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, আবৃত্তি চিত্রাংকন, সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফিন ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকিত আলী লাকী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেওয়া ভাষণের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। একই সঙ্গে দিবসটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারিকৃত পরিপত্রের ‘ক’ ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ দিন কোনও সরকারি ছুটি থাকবে না।