দুপুরে বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ, বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ঢল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৫, ২০২২, ০৮:৪০ এএম

দুপুরে বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ, বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের ঢল

বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শনিবার (৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল বিভাগীয় শাখা বিএনপির গণসমাবেম। দুপুর ২টায় বিএনপির পূর্বঘোষিত গণসমাবেশ হওয়ার আগেই গতকাল শুক্রবার সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য। মনে হচ্ছে  যেন একটু পরেই শুরু হবে সমাবেশ।

আগের চারটি বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো বরিশালের সমাবেশ ঘিরেও মহানগর এবং আশপাশের জেলায় উত্তাপ ছড়িয়েছে। জলে-স্থলে সব রকম পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আগে ভাগেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। পথে পথে বাধা, পুলিশের চেক পোস্ট, তল্লাশি ডিঙিয়ে গণসমাবেশে যোগ দিতে তিনদিন আগে থেকে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে রংপুরে আসেন তারা। কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন।

সড়ক ও নৌপথ বন্ধ থাকায় সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন বরিশাল। শহরের প্রবেশপথগুলোতে পুলিশ তল্লাশি করেছে। কিন্তু নদীবেষ্টিত বরিশালে বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী এসেছেন নৌপথে। শুক্রবার কয়েক শ ট্রলার, বালুবাহী জাহাজ ও স্পিডবোটে নেতাকর্মীরা শহরে প্রবেশ করেন। সড়কপথে গতকাল ভোর পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল, তিন চাকার গাড়ি ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে এসেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যার পর সমাবেশস্থলসহ আশপাশের এলাকায় নেতাকর্মীর ঢল নামে।

বরিশাল জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, বাকেরগঞ্জের কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে ১৫০টি ট্রলার এসেছে। ট্রলারে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।

গণসমাবেশের সফলতা নিয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না গণমাধ্যমকেবলেন, হাজার বাধা সত্ত্বেও শনিবারের গণসমাবেশ হবে সর্বকালের সর্ব বৃহৎ জনসভা। কোনো বাধাই নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে আটকে রাখতে পারবে না।

গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। কারো হাতে কাঁথাবালিশ, কারো হাতে শুকনো খাবার, আবার কারো হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। বিপুলসংখ্যক মানুষ বালুসহ বিভিন্ন মালবাহী লঞ্চ ও বাল্কহেডে শুয়ে-বসে গতকাল দিন পার করেছে।

আওয়ামী লীগ সমাবেশে বাধা না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও কয়েক দিন ধরে মহানগরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরে মহড়া দিচ্ছেন। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে মহড়া দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। 

বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের দলনেতা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল গণমাধ্যমকে বলেন, বাধা-বিপত্তি ঠেলে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসছেন। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসছেন। এমন স্বতঃস্ফূর্ত জনগণকে কোনো বাধাই আটকে রাখতে পারবে না।

পথে নিহত ১

এদিকে,  বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় মহাসমাবেশে অংশ নিতে আসার পথে ট্রলার দুর্ঘটনায় গতকাল শুক্রবার এক কর্মী নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে দলটি। ছগির খান (৩০) নামে ওই ব্যক্তি  বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামের ইদ্রিস খানের ছেলে।

দুই সাংবাদিক আহত

এদিকে, সমাবেশস্থলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের জন্য করা স্টেজ বিএনপি কর্মীদের হুলস্থূলের কারণে ভেঙে পরেছে। নেতাকর্মীদের হুলস্থুলের কারণেই মঞ্চ ভেঙে দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঞ্চ ভেঙে আহত হওয়া সময় টিভির বরিশালের ক্যামেরা পার্সন সুজয় দাস বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের জন্য করা স্টেজে উঠে লাফালাফি করছিল। আমরা সে সময় অনেক সংবাদকর্মী কাজ করছিলাম। তাদের প্রথমবার নামিয়ে দেওয়ার তারা পুনরায় স্টেজে উঠে লাফালাফি শুরু করলে স্টেজটি ভেঙে পরে। এতে আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি। এছাড়াও আরও একজন আহত হয়েছে ও একটি টিভি ক্যামেরাও ভেঙে গেছে।

প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা ও মামলার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাদেশের দশ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ হচ্ছে বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ।

Link copied!