বিকল্প ৬ টি দেশ থেকে সার আমদানির পরিকল্পনা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৭, ২০২২, ১১:১৪ পিএম

বিকল্প ৬ টি দেশ থেকে সার আমদানির পরিকল্পনা

সংকট মোকাবেলায় জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে জোর দেয়া হলেও খাদ্য পণ্য ও সার আমদানিতে সর্বোচ্চ প্রাধাণ্য দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে সার আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প বাজার হিসেবে কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতমুখী হচ্ছে বাংলাদেশ। এদিকে বিকল্প হিসেবে জর্ডান, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও ওমান থেকেও আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। যার ফলে সংকট কাটতে নতুন ৬ টি দেশের কাছে যাবে বাংলাদেশ।

উৎপাদনের চেয়ে আমদানির সিদ্ধান্ত

চলতি অর্থবছরে ইউরিয়া সার লাগবে ২৬ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হয় ১০ লাখ টন। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে সরকার এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও নরসিংদীর দুটি সার কারখানা বন্ধ রেখেছে। তাই চলতি মৌসুমে ইউরিয়া সারের জন্য সরকারকে বিশ্ববাজারে যেতে হবে। ইউরিয়া সারের ঘাটতি বেশি থাকছে। যার ফলে সৌদি আরব থেকে সাড়ে চার লাখ ও কাতার থেকে সাড়ে চার লাখ টন সার আমদানির চুক্তি হয়েছে। বাকি সার সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হবে।

দেশের পটাশ সারের চাহিদার ৬০ শতাংশ বেলারুশ ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। ওই দুই দেশের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিকল্প হিসেবে কানাডা থেকে চার লাখ টন পটাশ সার আমদানির একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। চুক্তির আওতায় আগামী সেপ্টেম্বরে দুই দফায় এক লাখ টন সার দেশে আসছে। আর টিএসপি সারের একটি অংশ আনা হতো রাশিয়া থেকে। এখন তা জর্ডান, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও ওমান থেকে আমদানির কথা চলছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে সরকার আমদানি বন্ধ রেখেছে। গতকালের আগ পর্যন্ত সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৩০ ডলারের নিচে না নামা পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চাল ও গম আমদানি করছে। বেসরকারি খাতের কয়েকশ প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১৪ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর কিছু আমদানি হলেও বড় অংশ এখন আমদানি হয়নি। সার আমদানি করছে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়।

শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, সার আমদানির ক্ষেত্রে আমরা আগে থেকেই বেশ কয়েকটি দেশের সাথে আলাপ করে রেখেছি। কানাডা উৎপাদন বৃদ্ধি করলে আমাদের দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের যেসব দেশ থেকে সার আমদানি হতো না সেই বাজার থেকেও সার আসবে।

বেলারুশ ও রাশিয়ান সার না আসায় ভর্তুকি

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, সাড়ে ৭ লাখ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং সাড়ে ৮ লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। ইউরিয়া সার ১০ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়, বাকিটা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি হয়। টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারেরও বড় অংশ আমদানি করা হয়। এমওপির উৎস মূলত বেলারুশ, রাশিয়া ও কানাডা।  সারের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য অনেক বেশি। তবে সরকার পরিবেশক বা ডিলারদের মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে সার বিক্রি করে।

বর্তমানে ইউরিয়া সারের মজুদ ৬ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন, টিএসপি ৩ লাখ ৯৪ হাজার টন, ডিএপি ৭ লাখ ৩৬ হাজার টন, এমওপি ২ লাখ ৭৩ হাজার টন।  বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও সারের বর্তমান মজুদ বেশি। বিগত বছরে এই সময়ে ইউরিয়া সারের মজুদ ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন, টিএসপি ২ লাখ ২৭ হাজার টন, ডিএপি ৫ লাখ ১৭ হাজার টন।

সরকারই বাড়িয়েছে দাম

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মে মাসের তুলনায় ২০২২ সালের মে মাসে ডিএপি ৪৭ শতাংশ, এমওপি ১৭৭ শতাংশ ও টিএসপি ৫৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রস্তাবিত বাজেটে সারের ভর্তুকি চার হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি রাখা হয়েছিল সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বজুড়ে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বছর শেষে তা ১২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়ায়। মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবার ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন খাদ্য আমদানির বেলায় রিজার্ভ ধরে রাখার কোনো চিন্তা করা হবে না। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের চাল গম আমদানিতে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, কয়েকটি ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গম আমদানির দায় পরিশোধ করতে চাচ্ছে না। গভর্নর সেসব এলসির দায় অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

Link copied!