অক্টোবর ১১, ২০২২, ০১:৩৮ এএম
রাজধানীর কাওরান বাজারে ভাড়ায় চালানো রিকশা হারিয়ে আর্তনাদ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলেন মেহেদী হাসান ওরফে শামীম নামের এক যুবক। প্রশাসন থেকে শুরু করে অনেক শিল্পপতি, এমনকি দরিদ্ররাও এগিয়ে আসেন তাঁর সহযোগিতায়। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি এক শিশু হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী। এরপর এ নিয়ে শুরু হয় নতুন করে আলোচনা। এই শামীমের বাবা মোতাহার হোসেনও ছিলেন সেই শিশু হত্যার আসামী। তিনি ২০১৬ সালে র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন।
গত কয়েকদিন ধরে শামীম আবার নতুন করে আলোচনা উঠে এসেছেন। এখন এ নিয়ে প্রতিনিয়ত বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন তিনি।
শামীমদের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিকশা হারিয়ে শামীমের কান্না দেশের লাখ লাখ মানুষের মনে দাগ কাটলেও ব্যতিক্রম ছিল তাঁর নিজ গ্রাম ঢাকার কেরানীগঞ্জের মুগারচর ও এর আশপাশের গ্রামগুলো। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শামীমের সেই কান্নাকাটির দৃশ্য দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, শামীমের আসল নাম মেহেদী হাসান। তাঁর গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রোহিতপুর ইউনিয়নের মুগারচর গ্রামে। তাঁর বাবা মোতাহার হোসেন ২০১৬ সালে আপন নাতি শিশু আব্দুল্লাহ হত্যার আসামি ছিলেন। তিনি র্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। শামীম ওরফে মেহেদীও একই মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। পরে বয়স বিবেচনায় দুই বছর পর জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান শামীম।
এ বিষয়ে শামীম দাবি করেন, মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, আর আমি জামিনে আছি। ১৬ বছর ১ মাস বয়সে সেই খুনকে কেন্দ্র করে আমাকে পুলিশ নিয়ে যায়। পরে আদালত ১০ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমার উকিল আপিল করে, আর আমরা জামিনের জন্যে চেষ্টা করি। পরে উচ্চ আদালত দুই হাজার টাকা বন্ডে চুক্তিতে আমাকে জামিনে মুক্তি দেয়।
একজন খুনের আসামী এবং তিনি জামিনে আছেন— এই তথ্য কেন ঘটনার দিন সবার সামনে জানাননি—এমন প্রশ্নে শামীম দাবি করেন, সেদিন তো এই বিষয়টা নিয়ে কোনো কথা উঠেনি। সেদিনের ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এ কে এম হাফিজ আক্তার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, জামিন পাওয়া একজনের সাংবিধানিক অধিকার। তবে তিনি যদি নিয়মিত হাজিরা না দেন, কিংবা কোনো অপরাধে জড়ান, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
কেরানীগঞ্জের অনেক বাসিন্দা জানান, গ্রামে আছে শামীমদের ডুপ্লেক্স বাড়ি, পাশেই পাকা মার্কেট। মাঠেও রয়েছে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া অনেক সম্পদ। অথচ সে রিকশা চালায়! এটা তাঁর প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে শামীম দাবি তরেন, আমার বাড়ি আছে, সেটি সত্য। আর আমরা আমাদের বাড়িতে থাকতে পারছি। কিন্তু আমাদের মার্কেট ২০১৬ সালে ওই ঘটনার পর বেদখল করা হয়েছে। আমি দখল নিতে গেলে আমাকে অপমান, অপদস্ত করা হয়।
নিম্ন আদালতে মামলার রায় হবার পর উচ্চ আদালতে জামিনে বেরিয়ে কোন মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফকির আব্দুল মান্নান জানান, হাইকোর্টে শামীমের সাজা পেন্ডিং আছে। যদি আদালত শামীমের সাজা বহাল রাখে, তাহলে যতদিন পর্যন্ত সে সাজা খেটেছে, সেটির বাইরে বাকি দিনের সাজা সে খাটবে। আবার আদালত তাঁকে খালাস দিলে, সেটিও দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণভাবে আদালতের এখতিয়ার।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অপর আইনজীবী আসমা হোসেন জানান, শামীমের সাজা এখন পর্যন্ত ডিফাইন করা হয়নি। আসলেই তাঁর সাজা আছে কি নাই, কোর্ট সেটি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। কোর্ট শুধু তাঁকে জামিন দিয়েছে। রিভিশনে কোর্ট জামিন দেয়। দুই বা তিন বছর পর বিভিন্ন গ্রাউন্ড দেখালে কোর্ট জামিন দেয়। কারণ রিভিশন চলমান। কিন্তু কোর্টের দৃষ্টিতে সে এখনো একিউজড। সে ক্ষেত্রে তাঁকে আসামী বলা ভুল হবে না।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আর রশীদ বলেন, ওই যুবক খুনের আসামি ছিল। দুই বছর জেল খাটার পর এখন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছে। এখন এই মামলার কী অবস্থা, সেটি আদালত জানে।