পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) উদ্যোগে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকার শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে।
রবিবার (৪ জুন) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে এই গুদাম উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আপাতত শ্যামপুরে ৫৪টি অস্থায়ী গুদাম করা হয়েছে এবং টংগীতেও কাজ চলছে। শ্যামপুরে পরবর্তীতে স্থায়ী গুদামের ব্যবস্থা করা হবে। ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকাবাসীর জন্য এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমি অনুরোধ করবো ক্যামিকেল ব্যবসায়ীদের প্রতি সহনশীল হতে এবং ব্যবসায়ীদের বলতে চাই আপনারা এগিয়ে আসুন। পুরাতন ঢাকাকে পর্যটন নগরী তৈরি করতে চাই। আমরা চাই একটি দুর্যোগবিহীন ঢাকা।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ আজকে যেভাবে উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে তা শুধু শেখ হাসিনার জন্য। বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি দল মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার চেষ্টা করছেন তাঁর উন্নয়নকে ঢাকতে চাচ্ছেন। আজকে তারাই গণতন্ত্রের কথা বলে আইনের কথা বলেন, মানবতার কথা বলেন।
ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বলেন, আর কখনো রাসায়নিক দ্রব্যের বিস্ফোরণে কোনো প্রাণ হারাতে হবে না, পুরান ঢাকাবাসী অবশ্যই এর সুফল ভোগ করবে। জাতীয় পার্টি সরকারি সব কাজে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লি. নারায়ণগঞ্জ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর আব্দুল্লাহ মাকসুদ বলেন, সব চ্যালেঞ্জ কে পেছনে ফেলে সফলতার সাথে আমরা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
সচিব শিল্প মন্ত্রণালয় জাকিয়া সুলতানা বলেন, যেগুলো অতি বিপদজনক সেগুলো টংগী যাবে যেগুলো কম বিপদজনক সেগুলো এখানে।
রাসায়নিক কারখানা ও গুদামে বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সে লক্ষ্যে পুরান ঢাকায় অবস্থিত রাসায়নিক পদার্থ মজুদের নিমিত্তে গুদাম ও কারখানাগুলো নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের লক্ষ্যে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মার্চে শুরু হয় এবং সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হলেও প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এর মধ্যে জিওবি তথা সরকারি অনুদান ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিসিআইসি দিয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
ফলে এতে সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ৬ দশমিক ১৭ একর জমির ওপর নির্মিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় ৩৫´× ৩৫´×২০´ আকারের ৫৪টি গুদাম ও ৭২´× ৩৬´ আকারে তিনতলা বিশিষ্ট দুইটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ইছামতি নদীর তীরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) স্থায়ীভাবে একটি কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ করছে। ৩১০ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠা ‘বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল পার্ক’ প্রকল্পের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখানে প্লট বরাদ্দের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।