সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত ও লোক দেখানো: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ৭, ২০২৩, ০৪:৫৯ পিএম

সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত ও লোক দেখানো: মির্জা ফখরুল

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কল্পনাপ্রসূত ও উচ্চভিলাষী মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন ছাড়া এই বাজেট আর কিছুই নয়। সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত ও লোক দেখানো। প্রস্তাবিত বাজেট সরকারের অর্থনৈতিক দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার ঘোষণা।’

বুধবার (৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় বাজেটে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।’

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে তা বর্তমান ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকারের অর্থনৈতিক দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার এক বার্ষিক ঘোষণাপত্র মাত্র। এই বাজেট কল্পনাবিলাসী, বাস্তবায়ন অযোগ্য এক উচ্চাভিলাষী বাজেট। এটা স্রেফ দুর্নীতিবাজ বর্তমান সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত অর্থ লুটেরাদের বাজেট।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে যাওয়া, বেপরোয়া অর্থপাচার, জনগণের কাঁধে রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা একবারের জন্যেও স্বীকার করা হয়নি। পরিত্রাণের উপায়ও বলা হয়নি। তেমনিভাবে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সুশাসন ও ন্যায়বিচার এর ধারণাকে।’

বাজেট পরিচালনার ব্যয়ের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘এই বাজেট পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং উন্নয়ন ব্যয় ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। বাজেটের এই অর্থের সংস্থান হবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা আয় থেকে, আর ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে। রাজস্ব আয়ের ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ পরোক্ষ কর (ভ্যাট) এবং ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর। এরই সঙ্গে সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মুদ্রাস্ফীতির হার ৬ দশমিক প্রত্যাশা করছে। এ বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রতারণামূলক, লোক দেখানো বাজেট, জনকল্যাণের নয়।’

বিএনপি বলছে, বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগসহ সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব প্রক্ষেপণ করা হয়েছে তা অর্জনযোগ্য নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও তা কীভাবে অর্জন করা হবে তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেটে নেই। চলতি অর্থবছরেও ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সংশোধনী বাজেটে তা পরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরাও শঙ্কিত। সারা বিশ্বে এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে আমরা খাবার তো বন্ধ করতে পারব না। একটি নমনীয় পথে এগুচ্ছি।’ তার কথাটি সঠিক নয়। বাস্তবতা হচ্ছে চীন, আমেরিকা, ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিশেষভাবে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।’’

এ সময় পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) চলতি সপ্তাহের তথ্যানুযায়ী, ভারতে বার্ষিক খুচরা বাজারের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথরেখা না দিয়েই কীভাবে মূল্যস্ফীতি টার্গেট ৬ শতাংশ ঘোষণা করেছে তা বোধগম্য নয়।’

ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে একদিকে বিনিয়োগ ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ অংকের ঋণ যদি সরকার নিজেই নিয়েই নেয়, তবে বেসরকারি খাত নিঃসন্দেহে ঋণপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। তাহলে বিনিয়োগ আসবে কোত্থেকে? এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কীভাবে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশে উত্তীর্ণ হবে তার কোনো নির্দেশনা দেননি অর্থমন্ত্রী।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি মহাবিপর্যয়ে রয়েছে। ডলারের সংকট প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে প্রায় সকল ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। সরকারি হিসাব মতে, গত ৭ বছরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। বিশ্বস্ত সূত্র মতে, ইতোমধ্যে নতুন নোট ছাপিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার ওপর। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এই চাপ মোকাবিলায় বাজেটে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন এবং খাদ্যসহ তেল, চাল, আদা, চিনি, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিবিএস এর সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরে সর্বোচ্চ। বাস্তবে যা ১৮-২০ শতাংশের উপরে হবে বলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

Link copied!