অক্টোবর ২৯, ২০২২, ০৯:৫৮ এএম
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, জ্বালানী তেলসহ নিত্য পণ্যের মুক্তি ও নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলের রংপুর বিভাগীয় মহাসমাবেশ। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
সমাবেশের আগে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা ৩৬ ঘন্টার ধর্মঘটকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক জনসমাগমের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আগে ভাগেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। পথে পথে বাধা, পুলিশের চেক পোস্ট, তল্লাশি ডিঙিয়ে গণসমাবেশে যোগ দিতে তিনদিন আগে থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। বাস বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে রংপুরে আসেন তারা। কেউ মাইলের পর মাইল হেঁটে, কেউ ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে করে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। কারো হাতে কাঁথাবালিশ, কারো হাতে শুকনো খাবার, আবার কারো হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
শুক্রবার রাতেই সমাবেশস্থল কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। তাঁবু টানিয়ে নেতাকর্মীরা মাঠেই রাত যাপন করেন। রাতভর স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত থাকে মাঠ।
সমাবেশ সম্পর্কে গতকাল শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমকে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু জানান, “আমরা আগে থেকেই জানতাম সমাবেশের আগে সরকার এ ধরনের একটি ধর্মঘট দেবে। আমাদের নেতাকর্মীরা এ ধর্মঘটকে পাত্তা দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী রংপুরে চলে এসেছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও হেঁটে, সাঁতরিয়ে অথবা সাইকেল চালিয়ে হলেও সমাবেশে আসছে।
এদিকে, সমাবেশে আসার পথে দলের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “পুরো বিভাগের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। হুমকি ধামকি দিচ্ছে। পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের লোকজনও বাধা দিচ্ছে। রেলওয়ে স্টেশনেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। ছাত্রাবাস এবং নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। যতই অপতৎপরতা চালানো হোক না কেন সব রংপুরে শনিবারের জনসমাবেশে মানুষের জোয়ার উঠবে।” এরই মধ্যে সব বাধা ভেঙে সমাবেশস্থল ভরে গেছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, বিভাগীয় সমাবেশগুলো যাতে সফল না হয়, মানুষের অংশগ্রহণ যাতে কম হয় সেজন্য সরকার ইচ্ছে করেই পরিবহন ধর্মঘট ডাকাচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
তারা বলছেন. এর আগেও গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে চলে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। ধর্মঘটে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এরপর খুলনায় গত ২২ অক্টোবর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে ঘোষণা দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।
আসছে ৫ নভেম্বর বরিশালে অনুষ্ঠেয় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ। যদিও পরিবহন মালিকরা বলছেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ করার দাবিতে তাদের ধর্মঘট। বিএনপি বলছে, তাদের সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা ও মামলার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সারাদেশের দশ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ হচ্ছে রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ।