অক্টোবর ১২, ২০২৩, ১২:২২ এএম
খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যেই সরকার বিদেশে যেতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ বিএনপি চেয়ারপারসন গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে তার চিকিৎসকদের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে দেশবাসীর মতই দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উদ্বিগ্ন। ওনার অসুস্থতার বিষয়টা আমরা বার বার আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি, জনগনকে সামনে এবং বিদেশে গণতান্ত্রিক বিশ্বকেও আমরা জানিয়েছি।”
‘‘ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারটা … এটা সম্পূর্ণভাবে এখন যেভাবে আছে তাতে করে এটা পরিস্কার যে, তারা বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করতে চায়। চিকিৎসার সুযোগ না দেয়ার মানে কি? হত্যা করা।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সেই উদ্দেশ্যেই তারা(সরকার) নির্বাচনগুলোতে তার প্রধান প্রতিপক্ষের প্রধান নেত্রী যাতে অংশগ্রহন করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা… ’১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বেই কিন্তু তারা তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে নিয়েছে।”
‘‘ আজকে কিন্তু একইভাবে যেহেতু সামনে নির্বাচন আছে দেশনেত্রী যাতে বাইরে যেতে না পারেন এবং সুচিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে দেশে এসে আবার তিনি জনগণের সঙ্গে চলাফেরা করতে না পারে সেই লক্ষ্যে তারা তাকে এভাবে হত্যা করতে চায়।”
গত ৯ আগস্ট থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন খালেদা জিয়া। গত ৯ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের ব্রিফিং কক্ষে মেডিকেল বোর্ডের পক্ষে অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ ম্যাডামের পেটে পানি জমছে, ফুসফুসে সংক্রমণ, পেটে অল্প অল্প রক্তক্ষরন হতে থাকে। এবারে হাসপাতালে ভর্তিতে উনাকে চার ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন। আমাদের এই মেডিকেল বোর্ড এবং চিকিৎসা সম্পৃক্ত সবাই চব্বিশ ঘন্টা উনাকে নিবিড় পর্যাবেক্ষনে রেখে এর মধ্যে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।
‘‘ কিন্তু এমন একটা অবস্থায় আমরা উপনীত হয়েছি যে পরবর্তিতে আমাদের সমস্ত চিকিৎসার অপশনগুলো প্রায় শেষ হয়ে এসছে। আমাদের হাতে কোনো অপশন নাই। যদি আমরা দুই বছর আগে ট্রিপস প্রসিডিউরটা করতে পারতাম তাহলে আজকে উনার পেটে ও বুকে কোনো পানি জমা হত না, উনার পেটে কোনো রক্তক্ষরন হত না।”
তিনি বলেন, ‘‘ চিকিৎসক হিসেবে চোখের সামনে একটা প্রতিকার যোগ্য অসুস্থতা যেটা করা সম্ভব, যেটা করা যাচ্ছে না বিধায় যে একজন রোগী ক্রমশ আস্তে আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে.. এটা আমাদের পক্ষে বিহেভ করা অনেক কঠিন। এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি।”
‘‘ আজকে আমি মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিভাবে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাতে চাই যে, এখনো সময় আছে যদি ‘ট্রিপস’ করা হয় এবং বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে নিয়ে উনার ‘ট্রিপস’ পরবর্তী লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যবস্থা করা হয় সম্ভবত এখনো আমাদের হাতে অপশন আছে যে, আমরা হয়ত উনার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারবো।”
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, ‘‘ খালেদা জিয়ার বিষয়টি আমরা আপনাদের জানিয়েছি, বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক বিশ্বকে জানিয়েছি। তার মুক্তির জন্য আমরা ‘একটার পর একটা’ কর্মসূচি দিচ্ছি।”
‘‘ আপনাদেরকে একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে, আমাদের দল একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। আমরা শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনে বিশ্বাসী, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। সেই এটি একটি ফ্যাসিবাদী সরকার। লড়াইটা কিন্তু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই, গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকার প্রধান ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে সরকার প্রচলিত আইনের অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পুরণের অসুস্থ প্রয়াস চালাচ্ছে বলে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।”
স্থায়ী কমিটির আবারো খালেদা জিয়াকে তার মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত বিদেশে পাঠানোর জন্য আরোপিত ‘অমানবিক বাধা’ দূর করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দেখুন যে, প্রত্যেকটা কথা প্রচন্ড সন্ত্রাসী কথাবার্তা এবং এই কথাগুলোর কিন্তু কেমিস্ট্রি। আমরা সবসময় বলি যে, আওয়ামী লীগের বডি কেমিস্ট্রিতে দুইটা বিষয় আছে একটা হচ্ছে সন্ত্রাস আরেকটা দুর্নীতি। এই দুইটার বাইরে কখনোই যায়নি। প্রথম থেকেই না। সেই কারণে আমাদের এই আন্দোলন এই সংগ্রাম।”
‘‘ এই সংগ্রাম প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই সরকার জনগনের রদ্ধ্ররোষের শিকার হয়ে তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে।”
আগামী ১৪ অক্টোবর ঢাকাসহ সারাদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর দাবিতে তিন ঘন্টার অনশন কর্মসূচি রয়েছে।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। গত ৯ অক্টোবরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকে রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।